মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে পরকীয়া প্রেমের জেরে প্রবাসী এমরান বাশারকে (৩২) জবাই করে খুনের ঘটনায় স্ত্রী ফারজানা আক্তারের (২৬) এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এর আগে তার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুর রহমান।
বিষয়টি হাজীগঞ্জ থানা সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই ঘটনায় প্রবাসী এমরান বাশারের স্ত্রী ফারজানা আক্তার ও তার পরকীয়া প্রেমিক সৈয়দ আশেকে এলাহী বাবু (২৮) সহ ফারজানার মা নাজমা খানম (৫৫) জেলহাজতে রয়েছেন। পলাতক রয়েছেন বড় বোন (এমরান বাশারের শ্যালিকা) মারজান আক্তার (৩২)।
এর আগে গত ৮ অক্টোবর হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৫নং ওয়ার্ড এবং হাজীগঞ্জ বাজারস্থ আমেনা ম্যানশনের ৩য় তলার নিজ ভাড়া বাসায় খুনের শিকার হন সৌদি প্রবাসী এমরান বাশার। তাৎখনিক পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধারসহ তার স্ত্রী ফারজানা আক্তারকে আটক করেন। পরবর্তীতে ঘটনার পরের দিন ৯ অক্টোবর নিহতের বোন রিনা আক্তার বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে হাজীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-৯) দায়ের করেন।
খুনের শিকার এমরান বাশার ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের দালাল বাড়ির আবুল বাশারের ছেলে। তার স্ত্রী ফারজানা আক্তার হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের জাখনি গ্রামের মৃত জসিম উদ্দিনের মেয়ে। তারা স্বামী-স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে স্বামী-স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া আফনানকে (৮) নিয়ে হাজীগঞ্জে ভাড়া বাসায় থাকেন।
মামলার প্রধান আসামি সৈয়দ আশেকে এলাহী বাবু শাহরাস্তি উপজেলার টামটা দক্ষিণ ইউনিয়নের আজাগরা গ্রামের মুন্সী বাড়ির সৈয়দ মাসুদ মুন্সীর ছেলে। অপর আসামিরা হলেন খুনের শিকার এমরান বাশারের স্ত্রী ফারজানা আক্তার, শাশুড়ি মা নাজমা খানম ও শ্যালিকা মারজান আক্তার।
থানা সূত্রে জানা গেছে, এমরান বাশারের স্ত্রী ফারজানা আক্তার এর সঙ্গে সৈয়দ আশেকে এলাহী বাবুর দীর্ঘদিন প্রেম ছিল। এ নিয়ে সালিশ বৈঠক ও থানায় অভিযোগ হওয়ার পর স্ত্রী ফারজানা আক্তার ও তার পরিবার ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে এমন কাজ করবেন না বলেও জানান তার স্ত্রী। একমাত্র ছেলে আফনানেরর কথা ভেবে স্বামী এমরান বাশার তাকে ক্ষমা করে দেন।
কিন্তু প্রবাসী স্বামী ছুটি শেষে সৌদিতে যাওয়ার পর স্ত্রী আবারো পরকীয়া প্রেম শুরু করেন। এরপর স্বামী ছুটিতে দেশে এলে স্ত্রী ও তার প্রেমিক দুজনে মিলে পরিকল্পনা করেন কিভাবে স্বামীকে সরানো যায়। এরপর গত ৮ অক্টোবার রোববার রাত অনুমান সাড়ে সাতটার দিকে এমরান বাশার ডাল পুরি কিনে বাসায় ফিরে আসার সময় আসামী আশেক এলাহী বাবুকে একটি ট্র্যাভেল ব্যাগসহ বাসার সামনে ঘুরাঘুরি করা অবস্থায় দেখতে পান।
এ সময় তাদের দুইজনের মাঝে বাক-বিতন্ডায় হয়। এক পর্যায়ে তারা উভয়ে ঘটনাস্থল বাসার দরজার সামনে এসে নক করলে আসামী আশেক এলাহী বাবুর পরকীয়া প্রেমিকা ফারজানা আক্তার দরজা খুলে দেন এবং আসামী আশেক এলাহী বাবুর ইশারায় ভিকটিম এমরান বাশার এর গলা কেঁটে দেওয়ার ইঙ্গিত দিলে আসামী ফারজানা আক্তার তাতে সায় দিয়ে আসামী ফারজানা অন্য কক্ষের দরজার আড়ালে চলে যান।
এরপর আসামী আশেক এলাহী ভিকটিম এমরান বাশারের পিছন থেকে ছুরি দিয়ে গলায় কয়েকটি পোঁচ দিলে সে ফ্লোরে লুটে পড়লে পুনরায় ছুরি দিয়ে বুকের বাম পাশে উপর্যুপরি আরো কয়েকটি আঘাত করে। পরর্বতীতে আসামী ফারজানা ও আশেক এলাহী ঘটনার ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার জন্য ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করে। আসামী আশেক এলাহী কৌশলে ট্র্যাভেল ব্যাগ ফেলে ছুরি নিয়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনায় জড়িত আসামী আশেক এলাহী বাবুকে গত ১১ অক্টোবর বুধবার রাতে যশোর জেলার অভয় নগর থানার নোয়াপাড়া এলাকা হতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব-৬ এর সহযোগিতায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মো. আব্দুর রহমান গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় এবং প্রেমিকা ফারজানা আক্তারকে ঘটনার পর পরই হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পরে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!