মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্:
হাজীগঞ্জে পরকীয়া প্রেমের জেরে হত্যাকাণ্ডের শিকার মো. এমরান হোসেনের (৪০) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে রোববার রাতে তিনি তার ভাড়া বাসায় খুনের শিকার হন। আর এই ঘটনায় প্রেমিক সৈয়দ আশেকে এলাহী বাবুকে (৩৬) নিয়ে প্রবাসী স্বামীকে জবাই করে খুনের অভিযোগ উঠে স্ত্রী ফারজানা বেগমের (৩০) বিরুদ্ধে।
এ দিকে ঘটনার দিন রোববার (৮ অক্টোবর) দিবাগত রাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার সৌদিআরব প্রবাসী মো. এমরান হোসেনের বোন রিনা বেগম বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামি করে হাজীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রেমিক সৈয়দ আশেকে এলাহী বাবু, হত্যাকাণ্ডের শিকার এমরান হোসেনের স্ত্রী ফারজানা বেগম, তার শাশুড়ী ও শালিকাকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার দিন থেকে ফারজানা পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন।
নিহত মো. এমরান হোসেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের দালাল বাড়ির মো. আবুল বাশারের ছেলে। তার স্ত্রী ফারজানা বেগম হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের জাখনি গ্রামের মৃত জসিম উদ্দিনের মেয়ে। তারা দীর্ঘদিন ধরে স্বামী-স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া আফনানকে (৮) নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। আর প্রেমিক শাহরাস্তি উপজেলার আজাগরা গ্রামের সৈয়দ বাড়ির বাসিন্দা।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, ময়নাতদন্ত শেষে এমরান হোসেনের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, মামলার আসামি ফারজানা বেগম পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন এবং অপর আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আশাকরি শিঘ্রই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
উল্লেখ্য, রোববার (৮ অক্টোবর) রাতে হাজীগঞ্জ বাজারের ট্রাক রোডস্থ আমেনার বাসার ৩য় তলায় নিজ ভাড়া বাসায় খুনের শিকার হন সৌদিআরব প্রবাসী মো. এমরান হোসেন। এই ঘটনায় প্রেমিক সৈয়দ আশেকে এলাহী বাবুকে নিয়ে স্বামীকে জবাই করে খুনের অভিযোগ উঠে স্ত্রী ফারজানা বেগমের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর পালিয়ে যায় পরকীয়া প্রেমিক এবং ওই দিন রাতেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফারজানাকে আটক করে পুলিশ।
ঘটনার দিন নিহতের স্ত্রী ফারজানা বেগম সংবাদকর্মীদের জানান, রোববার এশার নামাজের সময় আশেকে এলাহী তাদের বাসায় আসে। এসময় তার স্বামীর সাথে আশেকের কথা হয়। এরপর তিনি টয়লেট থেকে ফিরে এসে দেখেন তার স্বামীর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তখন তিনি তার স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
সংবাদকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আমি টয়লেট থেকে ফিরে এসে দেখি আশেকে এলাহী আমার স্বামীকে কুপাচ্ছে। এসময় আমি তাকে বাঁচাতে গেলে সে আমাকেও আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে আমি আমার স্বামীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। আশেক তাকে বিরক্ত করতো বলে তিনি জানান।
এ দিকে ঘটনার পর পরই ফারজানা বেগমের চিৎকার শুনে ওই বিল্ডিংয়ে ছুটে আসা শাহরাস্তি উপজেলার বলশিদ গ্রামের নাহার সংবাদকর্মীদের জানান, চিৎকার শুনে ওই বিল্ডিংয়ে গিয়ে দেখি ফ্যাটের দরজা খোলা। স্বামী এমরানের মাথা কোলে নিয়ে স্ত্রী চিৎকার করছে। এ সময় তার গলায় সাদা কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিলো।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী জিসান আহমেদ জানান, চিৎকার শুনে দৌঁড়ে এসে দেখি পুরো ফ্যাটে রক্তে ভরে আছে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়।
এমরান হোসেনের বোন রিনা বেগম সংবাদকর্মীদের জানান, আমার ভাবির (ফারজানা বেগম) সাথে তার বড় বোনের চাচাতো দেবর শাহরাস্তি উপজেলার আজাগরা গ্রামের সৈয়দ বাড়ির সৈয়দ আশেকে এলাহী বাবুর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এঘটনায় অনেক ঝামেলা ও দেন-দরবার হয়েছে। তারা আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে।
এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে আরো বলেন, তারা (ফারজানা বেগম ও সৈয়দ আশেকে এলাহী বাবু) আমার ভাইকে পরিকল্পনা করে জবাই করে হত্যা করেছে। এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই, আমি মামলা করবো।
এমরান হোসেনের বাবা আবুল বাসার হাসপতালে সংবাদকর্মীদের জানান, এমরানের স্ত্রী ফারাজানার বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় পরকীয়ার অভিযোগে বিচার হয়েছিল।
তিনি বলেন, এই পরকীয়ার ঘটনায় আমার ছেলে তার স্ত্রীকে না জানিয়ে গোপনে দেশে এসে হাতে-নাতে পরকীয়া প্রেম ধরে ফেলে। এ ঘটনায় ফারজানা আমার ছেলেকে তালাক দেয়। পরে ছোট্ট শিশু সন্তানের কথা চিন্তা করে পুনরায় তারা আবারো সংসার শুরু করে।
তিনি বলেন, পরকীয়ার জেরে আমার সন্তানকে তার স্ত্রীর হাতে জীবন দিতে হলো। তিনি ফারজানা ও তার পরকীয়া প্রেমিকের ফাঁসি দাবী করেন।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!