তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ফারিয়া জান্নাতি মীম, শ্বশুর ফারুক গাজী, শ্বাশুড়ী খাদিজা বেগম ও চাচা শ্বশুর মঞ্জু গাজীসহ ১০ জন আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী। ছয় বছরে দাম্পত্য জীবনের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখে ব্যবসায়ী নিয়াজ মোর্শ্বেদ তনয় শুক্রবার সকালে বিষপান করেছেন। স্বজনার তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের প্রেরন করেছে। শনিবার দুপুরে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তার মৃত্যুতে আমতলীর সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার দাম্পত্য জীবনের সুদীর্ঘ লেখা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
জানাগেছে, ২০১৮ সালে আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আলহাজ্ব নান্নু মোল্লার ছেলে নিয়াজ মোর্শ্বেদ তনয়ের সঙ্গে আরেক ব্যবসায়ী চাওড়া চলাভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ফারুক গাজীর মেয়ে ফারিয়া জান্নাতি মীমের বিয়ে হয়। বিয়ের ছয় মাস যেতে না যেতেই স্ত্রী মীমের প্রেমিক আমতলী পৌর শহরের লোচা গ্রামের বাসিন্দা মাছ ব্যবসায়ী বারেক প্যাদার ছেলে রাকিবের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ ছবি স্বামী তনয়ের হাতে ধরা পড়ে। এ নিয়ে স্বামী—স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্ধ হয়। পরে প্রেমিক রাকিব তাকে (তনয়) জানায় তার স্ত্রী মীমের সঙ্গে তার আগে বিয়ে হয়েছে। দ্বন্ধ আরো চরম আকার ধারণ করে। এর মধ্যে ওই দম্পতির ঘরে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম নেয়। স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও স্ত্রী মীমতে সুপথে আনতে পারেনি বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবী করেন তনয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তনয় লিখে গেলেন তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ফারিয়া জান্নাতি মীম, রাকিব, বাহাদুর, প্রিন্স রাজসহ একাধিক ছেলের সঙ্গে পরকিয়ার জড়িয়ে পরেছেন। এ সকল ঘটনা মেনে নিতে না পেরে তনয় স্ত্রী মীমকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর তালাক দেয়। তালাক নোটিশ পেয়ে ১৭ অক্টোবর স্ত্রী মীম তার স্বামী নিয়াজ মোর্শ্বেদ তনয়ের বিরুদ্ধে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে নির্যাতন ও যৌতুক মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই পুলিশ তনয়কে গ্রেপ্তার করেন। তনয়ের বাবা নান্নু মোল্লার অভিযোগ আমতলী থানার ওসি আরিফুল ইসলাম আরিফ মামলার নথি না পেয়েই তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে।
এ মামলায় তনয় ৬ দিন জেল হাজতে ছিল। এছাড়া তনয় সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে লিখে গেলেন ওসির সামনেই মীমের আত্মীয় প্রিন্স, জসিমসহ কয়েকজনে তাকে মারধর করছে কিন্তু ওসি তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। স্ত্রীর এমন পরকিয়া ও নির্যাতন সইতে না পেরে গত শুক্রবার ভোররাতে তনয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ীর ও তার স্বজনদের নির্যাতনের বর্ননা স্ট্যাটাস দিয়ে বিষপান করেন। মুহুর্তের মধ্যে তার স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে শুক্রবার সকালে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মনিরুজ্জামান খাঁন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরন করেন। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ওই হাসপাতালে তনয় শনিবার দুপুরে মৃত্যুবরণ করেছেন। ব্যবসায়ী তনয়ের মৃত্যুকে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ওইদিন সন্ধ্যায় ঢাকা শহীদ সোহরাওয়াদী হাসপাতালে তার মহদেহের ময়না তদন্ত করা হয়েছে। তনয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী মীম, তার বাবা ফারুক গাজী ও তাদের স্বজনরা গা—ঢাকা দিয়েছেন।
নিয়াজ মোর্শ্বেদ তনয়ের বাবা আলহাজ্ব নান্নু মোল্লা বলেন, আমার ছেলেকে ফারিয়া জান্নাতি মীম, ফারুক গাজী, খাদিজা বেগম ও মঞ্জু গাজীসহ তার স্বজনরা মানষিক নির্যাতন করে হত্যা করেছে। তিনি আরো বলেন, মীম একাধিক পরকিয়ার জড়িয়ে পড়লে আমার ছেলে তাকে তালাক দেয়। ওই তালাকের পর মীম আমার ছেলের বিরুদ্ধে বরগুনা নারী শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলার নথি না পেয়েই আমতলী থানার ওসি আমার ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলে বিচার দাবী করছি।
তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ফারিয়া জান্নাতি মীম ও তার বাবা ফারুক গাজীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
আমতলী থানার ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ নিয়াজ মোর্শ্বেদ তনয়কে নথি না পেয়ে গ্রেপ্তার এবং তনয়কে তার সামনে মীমের স্ব¦জনদের মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, আদালতের আদেশ মতে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তনয় মৃত্যুর ঘটনা শুনেছি। কিন্তু অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!