উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আজ রাতে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটার দিকে তিনি গুলশানের বাসা থেকে গাড়িতে করে বিমানবন্দরের পথে যাত্রা করেন।
সফরসঙ্গী কারা?
খালেদা জিয়ার সঙ্গে রয়েছেন তাঁর ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান এবং দীর্ঘদিনের পরিচর্যাকারী গৃহকর্মী ফাতিমা বেগম। কারাবন্দী থাকার সময় থেকেই ফাতিমা তাঁর দেখভাল করে আসছেন।
এছাড়াও, মেডিকেল বোর্ডের ছয়জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এই যাত্রায় তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিক, অধ্যাপক নরুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুনও রয়েছেন।
খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার ও প্রটোকল অফিসার এস এম পারভেজও যাচ্ছেন।
বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যাত্রা
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, কাতারের আমিরের উদ্যোগে বিশেষ এক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই ফ্লাইটটি রাত ১০টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে যাত্রা করবে।
দীর্ঘদিনের শারীরিক জটিলতা
লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং আর্থ্রাইটিসসহ একাধিক গুরুতর শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন খালেদা জিয়া। এর আগেও কয়েকবার তিনি জীবন-মৃত্যুর সংকটময় পরিস্থিতিতে পড়েছেন। বিএনপি ও তাঁর পরিবার বহুবার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করলেও তা মঞ্জুর করা হয়নি।
মুক্তি ও নতুন পরিকল্পনা
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির মামলায় তাঁর সাজা বাতিল করা হয়। মুক্তির পর এবারই তিনি প্রথমবারের মতো বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন।
চিকিৎসার গন্তব্য
খালেদা জিয়া প্রথমে যুক্তরাজ্যে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হবেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে জনস হপকিনস হসপিটালে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সাত বছর পর মা-ছেলের পুনর্মিলন
সাত বছর পর লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেখা হবে। তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান এবং মেয়ে জায়মা জারনাজ রহমানও তাঁকে স্বাগত জানাবেন। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, এই বহুল প্রতীক্ষিত মা-ছেলের পুনর্মিলনে ভবিষ্যৎ রাজনীতি, দলীয় দিকনির্দেশনা এবং পারিবারিক নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে।
সতর্কতার সঙ্গে আগামীর পথচলা
দেশের রাজনীতি ও বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের দিক থেকে খালেদা জিয়ার এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এদিকে তাঁর চিকিৎসা যাতে নির্বিঘ্নে হয়, সে জন্য দল ও পরিবার ইতোমধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: খালেদা জিয়ার এই সফর এবং চিকিৎসার সব কার্যক্রম নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে ব্যাপক আলোচনা। অনেকেই মনে করছেন, এই সফর তাঁর শারীরিক সুস্থতা ফেরানোর পাশাপাশি দলের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!