কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিশ্বে নতুন প্রতিযোগিতার সূচনা করেছে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডিপসিক। স্বল্প খরচে উন্নত কর্মক্ষমতা ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির দাবি নিয়ে বাজারে এলেও এর তথ্য সুরক্ষা ও গোপনীয়তা নীতি নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং এর সার্ভার চীনে অবস্থিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিপসিকের এআই মডেল গুগল, ওপেনএআইসহ অন্যান্য বৃহৎ ভাষা মডেলের (এলএলএম) সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম। তবে এর জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি
তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী ইতোমধ্যে তাদের সদস্যদের ডিপসিক ব্যবহার না করার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের মতে, এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সংবেদনশীল তথ্য চীনে চলে যেতে পারে, যা সামরিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। তবে কিছু প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞ বিষয়টি অতিরঞ্জিত বলে মনে করছেন।
এআই প্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পারপ্লেক্সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অরবিন্দ শ্রীনিবাস জানান, ডিপসিকের কিছু মডেল অনলাইনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ল্যাপটপ বা ডিভাইসে ব্যবহার করা যায়, যা তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা দিতে পারে।
ডিপসিকের তথ্য সংগ্রহের নীতিমালা
ডিপসিকের গোপনীয়তা নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যবহারকারীদের তথ্য চীনে অবস্থিত সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি তথ্য সংগ্রহকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছে—
✅ প্রথমত: ব্যবহারকারীর সরবরাহ করা তথ্য—বার্তা বা অডিও ইনপুট, আপলোড করা ফাইল, চ্যাট ইতিহাস, ই-মেইল ঠিকানা, ফোন নম্বর, জন্মতারিখ ইত্যাদি।
✅ দ্বিতীয়ত: স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংগৃহীত তথ্য—ডিভাইসের মডেল, অপারেটিং সিস্টেম, আইপি ঠিকানা, কুকি, কী-স্ট্রোক প্যাটার্ন, ক্র্যাশ রিপোর্ট ইত্যাদি।
✅ তৃতীয়ত: অন্যান্য উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্য—যদি ব্যবহারকারী গুগল বা অ্যাপলের মাধ্যমে ডিপসিক অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন, তবে সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মের নির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা হতে পারে।
এছাড়াও, বিজ্ঞাপনদাতাদের মাধ্যমে মুঠোফোন শনাক্তকরণ নম্বর, ই-মেইল, ফোন নম্বর ও কুকি আইডি সংগ্রহ করা হতে পারে।
ব্যবহারকারীদের তথ্য কীভাবে ব্যবহৃত হয়?
ডিপসিকের নীতিমালায় আরও উল্লেখ রয়েছে, সেবার মান উন্নয়নের জন্য ব্যবহারকারীদের ইনপুট পর্যালোচনা করা হবে এবং এআই প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োগ করা হবে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের করপোরেট গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে তথ্য ভাগ করতে পারে এবং আইনি প্রয়োজনে সরকারি সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সাথেও শেয়ার করতে পারে।
ডিপসিক বনাম অন্যান্য এআই প্ল্যাটফর্ম
ডিপসিকের তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি অনেকটাই ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটির মতো। গোপনীয়তা উদ্বেগের কারণে চ্যাটজিপিটি একসময় সমালোচিত হয়েছিল এবং ইতালিতে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধও হয়েছিল।
তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের এআই প্ল্যাটফর্মগুলোর তথ্য সংগ্রহ নীতির স্বচ্ছতা জরুরি। ডিপসিকের নিরাপত্তা ইস্যু যদি যথাযথভাবে সমাধান না করা হয়, তাহলে এটি বিশ্বব্যাপী আরও কঠোর নজরদারির মুখে পড়তে পারে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!