সিলেটের তামাবিল হয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং যাওয়ার পথটি যেন এক মনোমুগ্ধকর রোমাঞ্চ। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, খাঁজকাটা রাস্তা আর প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য এই পথের প্রধান বৈশিষ্ট্য। গতকাল বিকেলে এই পথ ধরেই বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল পৌঁছায় শিলংয়ে। পথে এক পশলা বৃষ্টি পরিবেশকে আরও মনোরম করে তোলে।
শহরের ভেতরেও পাহাড়ি আবহ বিরাজমান। খাড়া রাস্তা, পাহাড় কেটে তৈরি করা বাড়িঘর যেন ছবির মতো সাজানো। ইউরোপীয় পরিবেশের ছোঁয়া পাওয়া এই শহর পরিচ্ছন্ন ও ঠান্ডার জন্য বিখ্যাত। গতকাল সন্ধ্যায় তাপমাত্রা নেমে আসে ১৪ ডিগ্রিতে, সঙ্গে হালকা বৃষ্টি যেন ঠান্ডাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ দলের জন্য প্রতিকূলতা:
বাংলাদেশ ফুটবল দল এখানে খেলতে এলেও শুরু থেকেই পড়েছে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে অনুশীলনের জন্য ভালো মাঠ না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন দলের ম্যানেজার আমের খান।
তিনি বলেন, "আমাদের অনুশীলনের জন্য নির্ধারিত সময় ছিল বিকেল সাড়ে পাঁচটা। কিন্তু তখনও মাঠ দেওয়া হয়নি। পরে সাড়ে সাতটায় যুদ্ধ করে মাঠ নিতে হয়েছে, তাও টাকা দিয়ে।"
বাংলাদেশ দলের অনুশীলনের জন্য প্রথমে দেওয়া হয় নর্থ ইস্টার্ন হিলস বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ, যা ছিল নিম্নমানের এবং ফ্লাডলাইট সুবিধাবিহীন। কোচ হাভিয়ের কাবরেরা এতে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে, ভারতীয় দল একই ভেন্যুর মূল মাঠে অনুশীলনের সুযোগ পেলেও বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে গ্রাউন্ড-টু টার্ফ মাঠ। এতে ভারত আয়োজক হিসেবে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশি ফুটবলারদের মনোভাব:
এই প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা অনুশীলনে মনোযোগী। দলের অন্যতম মিডফিল্ডার মোহাম্মদ হৃদয় বলেন, "হামজা চৌধুরীর কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখছি। আমি তাঁকে ১০০ তে ১০০ নম্বর দেব।"
ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিন বলেন, "অনুশীলন দেরিতে শুরু হওয়ায় আমাদের সমস্যা হচ্ছে। আমরা ঘাসের মাঠে অনুশীলন করতে পারলে ভালো হতো।"
এদিকে, কোচ কাবরেরা দলের মনোযোগ ধরে রাখতে বাড়তি সতর্কতা নিয়েছেন। শিলংয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে— পূর্ব অনুমতি ছাড়া কেউ যেন টিম হোটেলে না যায় এবং অনুশীলনের লাইভ সম্প্রচার যেন না করা হয়। কারণ, ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে দল সম্পর্কে বাড়তি তথ্য যাতে প্রতিপক্ষের কাছে না যায়, সেটি নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত।
বাংলাদেশি দর্শকদের জন্য শিলং:
শিলংয়ে বাংলাদেশি দর্শকদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। শহরের প্রাণকেন্দ্র পুলিশ বাজার এলাকায় বাংলাদেশিদের দেখা মেলে, এমনকি এখানকার রেস্টুরেন্টেও বাংলাদেশি খাবার পাওয়া যায়।
মেঘালয়ের ডাউকি সীমান্তে দেখা গেছে সাবেক ফুটবলার বিজন বড়ুয়া, আবাহনীর সহকারী ম্যানেজার নজরুল ইসলাম ও সহকারী কোচ প্রাণতোষ কুমারকে। তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন খাগড়াছড়ির ফুটবল কোচ জ্যোতিষ বসু ত্রিপুরা, যিনি এখানে এসেছেন মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে। একইসঙ্গে ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ দেখার সুযোগও নিচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, "সৌভাগ্য আমাদের, হামজা চৌধুরীর মতো ফুটবলার দলে এসেছেন। ভারতের বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, তবে আশা করি আমরা জিতব।"
বাংলাদেশ দল এখন প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করেই তা করতে হচ্ছে। তবে ফুটবলপ্রেমীরা আশায় বুক বাঁধছেন, ২৫ মার্চ মাঠে নামলে বাংলাদেশ দল সব বাধা জয় করে মাঠ থেকেই জয়ের হাসি নিয়ে ফিরবে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!