৭০ হাজার দর্শকের গুঞ্জনে মুখরিত ব্রাসিলিয়ার মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়াম। কিন্তু ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময় যেন ছড়িয়ে ছিল হতাশার ছাপ। আরও একবার ব্যর্থতার গল্প লিখতে চলেছে ব্রাজিল, এমনটাই ধরে নিয়েছিলেন সবাই। কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি যখন ১-১ সমতায় শেষ হতে চলেছে, তখনই বাজিমাত করলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া দুর্দান্ত এক শটে বদলে দিলেন পুরো দৃশ্যপট। জয় নিশ্চিত করল ব্রাজিল, কিন্তু এই জয় কি সত্যিই আশার আলো দেখাচ্ছে?
ভিনিসিয়ুসের দুর্দান্ত গোল, তবুও ব্যর্থতার ছাপ
ম্যাচের প্রথম দিকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে শুরু করেছিল ব্রাজিল। মাত্র চার মিনিটেই কলম্বিয়ান বক্সে ফাউলের শিকার হয়ে পেনাল্টি আদায় করে নেন ভিনিসিয়ুস। সেই পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন রাফিনিয়া। শুরুতে একের পর এক ওয়ান-টাচ পাস, গতিময় ফুটবল আর প্রতিপক্ষের রক্ষণে চাপ সৃষ্টি—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল, হয়তো পুরোনো জিঙ্গা ফুটবলের ছন্দে ফিরছে ব্রাজিল।
কিন্তু কয়েক মিনিট পরই বদলে যায় দৃশ্যপট। ধীরে ধীরে ব্রাজিলের ফুটবলে দেখা দেয় সমন্বয়হীনতা। কলম্বিয়া ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করলে যেন পথ হারায় দরিভাল জুনিয়রের দল। বিশেষ করে ২০ মিনিটের পর ব্রাজিল একেবারেই ছন্দহীন হয়ে পড়ে। গারসন মাঠ ছাড়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। পরিকল্পনাহীন ফুটবল, ভুল পাস আর ব্যাকফুটে চলে যাওয়ার প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
অলস রক্ষণ, আত্মবিশ্বাসহীন ফুটবল
ব্রাজিলের রক্ষণভাগের সমস্যাগুলো আরও প্রকট হয়ে ওঠে ৪১ মিনিটে, যখন লুইস দিয়াজের শটে সমতায় ফেরে কলম্বিয়া। গোলটি ব্রাজিল রক্ষণভাগের একেবারেই দৃষ্টিকটু ভুলের উদাহরণ। নিজেদের বক্সে চারজন ডিফেন্ডার থাকলেও কেউই এগিয়ে এসে বল ব্লক করার চেষ্টা করেননি! দেখে মনে হচ্ছিল, যেন প্রতিপক্ষকে গোল করার সুযোগ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শুধু রক্ষণ নয়, মাঝমাঠেও ছিল বিশাল ফাঁক। ৮৩ শতাংশ নিখুঁত পাস দেওয়ার পরও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে ভুল পাসের মিছিল ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে গতির ওপর আক্রমণে ওঠার সময় বারবার ভুল পাসে সম্ভাবনাময় আক্রমণ নষ্ট করেছে ব্রাজিল। মাঝমাঠের এই দুর্বলতা এবং ফুলব্যাকদের নিষ্প্রভ পারফরম্যান্স ব্রাজিলের ফুটবলকে আরও বেশি প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
শেষ মুহূর্তে ভিনিসিয়ুসের ম্যাজিক
এই হতাশার মাঝে ব্রাজিলকে রক্ষা করেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া দুর্দান্ত এক শটে ব্রাজিলকে এনে দেন ২-১ গোলের জয়। এই জয় হয়তো সাময়িক স্বস্তি দেবে ব্রাজিল সমর্থকদের, কিন্তু দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
বড় চ্যালেঞ্জের সামনে দরিভাল
কাতার বিশ্বকাপের পর থেকেই ছন্দহীন এক যাত্রায় রয়েছে ব্রাজিল। নতুন কোচ দরিভাল জুনিয়র দায়িত্ব নিয়েছেন বড় আশা নিয়ে, কিন্তু খুব দ্রুতই তার কৌশলের দুর্বলতাগুলো প্রকাশ পেয়েছে। প্রতিপক্ষের বিপক্ষে পরিকল্পনা সাজাতে ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি।
আগামী বিশ্বকাপের জন্য ব্রাজিলের হাতে সময় খুবই কম। এরই মধ্যে সামনে অপেক্ষা করছে আর্জেন্টিনার কঠিন চ্যালেঞ্জ। এমন পরিস্থিতিতে দরিভাল যদি দ্রুত দলের সমস্যা সমাধান না করতে পারেন, তবে অন্ধকার টানেলের শেষ কোথায়, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!