বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি হিসেবে কাজী সালাউদ্দিনের দায়িত্ব ছিল দেশের ফুটবল উন্নয়নের পথে কাজ করা। কিন্তু ফুটবলের অগ্রগতি যেখানে থেমে গেছে, সেখানে সালাউদ্দিন নিজে ব্যস্ত ছিলেন ঘনিষ্ঠ সহযোগী মাহফুজা আক্তার কিরণের উত্থান নিশ্চিত করতে। সালাউদ্দিনের আশীর্বাদে কিরণ ধীরে ধীরে বাফুফের ক্ষমতাবলে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন এবং তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আন্তর্জাতিক ফেডারেশন (ফিফা) এবং এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)-এর শীর্ষ মঞ্চে।
জানা গেছে, কিরণকে খুশি রাখতে সালাউদ্দিন পুরুষ ফুটবলে আগ্রহ হারিয়ে নারী ফুটবলে বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেন। তৎকালীন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার কাছে মেয়েদের বয়সভিত্তিক কিছু সাফল্যকে বড় করে দেখিয়ে বাহবা কুড়িয়েছেন সালাউদ্দিন-কিরণ গোষ্ঠী। একই সঙ্গে নিজের বিভিন্ন স্বার্থসিদ্ধি করতে ব্যবহার করেছেন রাষ্ট্রযন্ত্রকেও। বাফুফের নির্বাচনেও সালাউদ্দিন-কিরণ গং ভুয়া ভোটার তৈরি করে ভোট বাণিজ্য চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
একসময়, বাফুফে ভবনের চারতলায় নারীদের কার্যত বন্দি করে রাখা হতো বলে অভিযোগ ফুটবলারদের। প্রতিবাদের কোনো সুযোগ ছিল না, মুখ খুলতে মানা ছিল সবাইকে। দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সাহসী ফুটবলাররা সেই নীরবতা ভাঙেন। সাফজয়ী কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের পদত্যাগ এবং সিরাত জাহান স্বপ্না ও আঁখি খাতুনের মতো প্রতিভাবান ফুটবলারদের হতাশা থেকে অবসর নেওয়ার পেছনেও কিরণের প্রভাব ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
অলিম্পিক বাছাইয়ে নারী দল পাঠানোর সময় ‘টাকা নেই’ অজুহাত তুলে গত বছরের মার্চে দলকে না পাঠিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার জন্ম দেন সালাউদ্দিন-কিরণ জুটি। সমালোচনার মুখে সাংবাদিকদের বাবামা তুলে গালিগালাজ করেন সালাউদ্দিন এবং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকেও অবমাননাকর মন্তব্য করেন।
তারা দাবি করতেন নারী ফুটবলের উন্নতির কথা, তবে সত্যিকার অর্থে কিরণের নেতৃত্বে সেই উন্নতি কতটা হয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। এএফসি ওমেন্স চ্যাম্পিয়নস লিগে ভারত, নেপাল, এমনকি ভুটানের ক্লাবগুলো থাকলেও বাংলাদেশের কোনো ক্লাবকে পাঠানো হয়নি। চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের নাম পাঠানোর কথা থাকলেও কিরণের ব্যক্তিগত ক্ষোভের কারণে তা পাঠানো হয়নি। এ ছাড়াও, নারী ফুটবল দলের জন্য ফিফা থেকে আসা অনুদানের অর্থ ভুয়া প্যাড ব্যবহার করে নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ব্যয় দেখানোর অভিযোগ রয়েছে কিরণের বিরুদ্ধে।
এভাবে ঘনিষ্ঠ সহযোগী কিরণের স্বার্থে কাজী সালাউদ্দিনের প্রত্যক্ষ সমর্থনে দেশের ফুটবল দিনে দিনে পিছিয়ে পড়ছে, আর ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!