দুই সপ্তাহ আগেও যে দলটি তাদের অধিনায়কের মতে ‘মানসিকভাবে তলানিতে ছিল’, সেই দলটাই বিশ্বকাপ জিতবে—এমন কিছু হয়তো কল্পনার বাইরে ছিল। কিন্তু ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দল সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছিল। ঠিক আজকের দিনেই, ৩৩ বছর আগে, পাকিস্তান বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল, আর সেটাও রমজানের ১৮তম দিনে।
১৯৯২ বিশ্বকাপের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত নিয়ে জিও নিউজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কথা বলেন দলের কয়েকজন নায়ক—ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ইনজামাম-উল-হক, মঈন খান, মুশতাক আহমেদ ও রমিজ রাজা। অনুষ্ঠানে উঠে আসে সেই সময়ের নানা গল্প, পরিকল্পনা এবং দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের কাহিনি।
ইমরানের নেতৃত্বে অসম্ভবকে সম্ভব
অধিনায়ক ইমরান খান ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। পুরো দল এখনো তাঁর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। রমিজ রাজা মজার ছলে বলেন, ‘মনে হচ্ছে আমরা ড্রেসিংরুমে ফিরে গেছি, এবং এখনো আপনাকে ভয় পাই!’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘এমন একটা দুর্বল দল নিয়েও আপনি বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখলেন, কীভাবে?’
ইমরান উত্তর দেন, ‘প্রথমত, সবাই ছিল তরুণ, আর আমি ছিলাম প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি। দ্বিতীয়ত, বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা আমার আগেও ছিল। ১৯৮৩ সালে আমি শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছি, ১৯৮৭ বিশ্বকাপে পাকিস্তান ফেবারিট ছিল, কিন্তু সফল হয়নি। ১৯৯২ বিশ্বকাপে আমাদের প্রধান দুই ম্যাচ উইনার সাঈদ আনোয়ার ও ওয়াকার ইউনিস ছিল না। তবুও আমি বিশ্বাস করতাম, আমরা পারব।’
ব্যর্থতা থেকে শিখে এগিয়ে যাওয়া
ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে যতগুলো খেলেছি, সব কটিতেই হেরেছি! এমনকি চল্লিশোর্ধ্ব খেলোয়াড়দের বিপক্ষেও হেরেছি।’ রমিজ স্মরণ করিয়ে দেন, ২৫ দিন আগে দল অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছালেও তখনো চূড়ান্ত দল ঠিক হয়নি। কারণ হিসেবে ইমরান বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আগে যাওয়া হয়েছিল।’
বিশ্বকাপ জয়ের সেরা মুহূর্তগুলো
বিশ্বকাপের মাঝপথে পাকিস্তানের পারফরম্যান্স ছিল শোচনীয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৭৪ রানে অলআউট হওয়ার পরও ইমরান আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তিনি তখনই বলেছিলেন, ‘আমরা বিশ্বকাপ জিতব।’
সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইনজামামের বিস্ফোরক ৬০ রানের ইনিংস এবং ফাইনালে ওয়াসিম আকরামের সেই দুটি জাদুকরী ডেলিভারি ছিল পাকিস্তানের জয়ের মূল চাবিকাঠি। ওয়াসিম বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা ছিল ইয়র্কার, কিন্তু ইমরান ভাই বললেন, লুইস সেটা আঁচ করতে পারে, তাই ইনসুইং করো। সেই বলেই লুইস বোল্ড!’
ইমরানের জন্য বিশ্বকাপের গুরুত্ব
রমিজ জানতে চান, বিশ্বকাপ জয় ইমরানের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? উত্তরে ইমরান বলেন, ‘ক্রিকেটের প্রতি আমার টান কমে গিয়েছিল। কিন্তু বিশ্বকাপ জিততে চেয়েছিলাম, কারণ এটা না জিতলে ক্যানসার হাসপাতাল বানাতে পারতাম না। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের মানুষদের মুখে যে হাসি দেখেছি, সেটাই ছিল সবচেয়ে বড় পাওয়া।’
৩৩ বছর পেরিয়ে গেলেও পাকিস্তানের ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয় রূপকথার মতোই মনে হয়। সেই দলের লড়াকু মানসিকতা আর ইমরানের নেতৃত্ব আজও ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!