মোবাইলে কলরেট ও ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম যেখানে কমিয়ে আনার দাবি দীর্ঘদিনের, সেখানে আবারও বাড়তে যাচ্ছে গ্রাহকের খরচ। মুঠোফোন গ্রাহকদের সেবার ওপর আরও শতাংশ অতিরিক্ত সম্পূরক কর আরোপ করতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। শিগগিরই এ নিয়ে জারি করা হতে পারে নতুন প্রজ্ঞাপন।এবিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে তাদেরই কথা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র বলছে, মোবাইল ফোন সেবায় বিদ্যমান ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের সঙ্গে আরও ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক সংযোজনের বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যে। অনুমোদন মিলেছে দুটি মন্ত্রণালয় থেকেও। এখন শুধু অপেক্ষা প্রজ্ঞাপন জারির।
এবিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী মেহেরাব হোসেন বলেন,"আমাদের অনলাইন ক্লাস, গবেষণা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য মোবাইল ফোনে যোগাযোগ বিশেষ করে মোবাইল ডাটা অপরিহার্য। ট্যাক্স বৃদ্ধির কারণে খরচ অনেকাংশে বেড়ে যাবে, যা আমাদের মত অনেক শিক্ষার্থীর জন্য আর্থিকভাবে চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে গ্রামীণ এবং নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীরা এই ট্যাক্স বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।আমি মনে করি এই সিদ্ধান্ত নতুন বৈষম্যহীন বাংলাদেশের লক্ষ্যের সাথে সাংঘর্ষিক।আশা করি অন্তবর্তীকালীন সরকার পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে এই ট্যাক্স প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীবান্ধব একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের নবম ব্যাচের শিক্ষার্থী আহনাফ তাহমিদ বলেন,"আমাদের কলরেট এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ কমানোর দাবি অনেকদিনের, অথচ সরকারী কর বৃদ্ধির ফলে ক্রমাগত ভাবে তা বেড়েই চলেছে।একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এবং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি চাই যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ইন্টারনেট সেবা আরও সহজলভ্য করতে কর বাড়ানোর সীদ্ধান্ত বদলে তা কমিয়ে কলরেট এবং ইন্টারনেট যোগাযোগ খরচ আরও কমানো হোক এবং ইন্টারনেটের মেয়াদ সিস্টেম উঠিয়ে নেয়া হোক।"
মার্কেটিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাইম আহমেদ বলেন," কলরেট যেখানে অনেক বেশি সেখানে অতিরিক্ত ট্যাক্স ধার্য করার অর্থ হচ্ছে জনগনের উপড় বাড়তি মূল্য নির্ধারণ করা। যা বহন করা আমাদের মত শিক্ষার্থীসহ সকলের নিকটই কষ্টকর। আর যেহেতু বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেশি সেহেতু সরকার এখান থেকে বড় মাত্রায় ট্যাক্স আদায় করতে পারছে। তাই নতুন ট্যাক্সের সিন্ধান্তকে অবশ্যই প্রত্যাহার করা উচিৎ বলে আমি মনে করি"।
উল্লেখ্য যে সম্পূরক শুল্ক আরও ৩ শতাংশ বাড়ানো হলে গ্রাহকদের রিচার্জ বাবদ কর দিতে হবে ৫৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ বাবদ কাটা যাবে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ। রেভিনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স বাবদ কাটা যাবে ৬ দশমিক ১ শতাংশ এবং পরোক্ষ কর বাবদ কাটা যাবে ২০ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ, গ্রাহক তার মোবাইলে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সবমিলিয়ে তাকে কর দিতে হবে ৫৬ টাকা ৩০ পয়সা। ফলে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জে ব্যবহার করতে পারবেন মূলত মাত্র ৪৩ টাকা ৭০ পয়সা।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!