মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে মানুষ একমাত্র কি? পৃথিবীই কি একমাত্র গ্রহ, যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে মানুষ প্রাচীনকাল থেকে আকাশের দিকে তাকিয়ে মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন করতে চেষ্টা করেছে।
পৃথিবী আমাদের জন্মভূমি হলেও মহাবিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতে এটি খুবই ছোট। পৃথিবীর ব্যাস প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কিলোমিটার। তবে রাতের আকাশে জ্বলতে থাকা লাখো নক্ষত্রের দিকে তাকালে, মনে হয় যে পৃথিবী একমাত্র গ্রহ নয় যেখানে প্রাণের সম্ভাবনা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক্সোপ্ল্যানেট বা বহিঃসৌরগ্রহের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন, যা সূর্য ছাড়া অন্য নক্ষত্রের চারপাশে ঘোরে। এই রহস্যময় জগতের সঙ্গেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরীর "এক্সোপ্ল্যানেট: বহিঃসৌরগ্রহের খোঁজে" বইটি।
বইটি তিনটি মূল অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশে আলোচনা করা হয়েছে এক্সোপ্ল্যানেট বা বহিঃসৌরগ্রহ কীভাবে আবিষ্কৃত হয়। এরপর গ্রহের জন্ম কিভাবে ঘটে, সে বিষয়ে চমৎকারভাবে আলোচনা করা হয়েছে। ৪৫৬ কোটি বছর আগের 'অ্যালেন ডে' নামক মহাজাগতিক পাথরের তেজস্ক্রিয় উপাদান পরিমাপ করে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বয়স সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন।
এছাড়া, বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে সৌরজগতের জন্মের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। মেঘমালার প্ল্যানেটারি ডিস্ক থেকে গ্রহের জন্মের প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে। মহাজাগতিক সংঘর্ষের মাধ্যমে চারটি পাথুরে গ্রহ—বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল—কিভাবে তৈরি হয়েছিল, তা জানা যায়।
পৃথিবীতে পানি কোথা থেকে এসেছিল, সেই প্রশ্নের উত্তরে দুটি সম্ভাব্য তত্ত্বও আলোচনা করা হয়েছে। বইয়ের পরবর্তী অংশে বিপজ্জনক গ্রহগুলোর রাজ্য, হট জুপিটার ও সুপার আর্থের মত গ্রহগুলোর জীবন এবং নক্ষত্রকে ঘিরে গ্রহের বাসযোগ্যতা নিয়েও আলোচনা রয়েছে।
বইটি শেষ পর্যন্ত পাঠককে মহাজাগতিক ভ্রমণে নিয়ে যায় এবং নতুন নতুন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অনুপ্রাণিত করে। এক্সোপ্ল্যানেট: বহিঃসৌরগ্রহের খোঁজে বইটি বিজ্ঞানের মজাদার দুনিয়া এবং মহাবিশ্বের রহস্যের দরজা খুলে দেয়। বইটি বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা না থাকা সত্ত্বেও সবার জন্য পাঠযোগ্য।
এটি ২০১৭ সালে প্রকাশিত এলিজাবেথ টাস্কারের দ্য প্ল্যানেট ফ্যাক্টরি বইয়ের আলোকে রচিত, তবে লেখক ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরী সোজাসাপটা ভাষায় মহাজাগতিক গবেষণা সহজভাবে তুলে ধরেছেন, যা পাঠকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও বোধগম্য।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!