সাব্বির আলম বাবু, বিশেষ প্রতিনিধিঃ শিক্ষার্থীদের আঁকা রংতুলির গ্রাফিতিতে রঙিন ভোলা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে মানুষের মনে স্মরণীয় করে রাখতে ভোলা শহরের সরকারি স্কুলের ইলিশা সড়কের পাশেই স্কুলের দেয়ালে একদল শিক্ষার্থীরা দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকছেন শিক্ষার্থীরা। জেলা শহরের বিভিন্ন বিভিন্ন এলাকায় দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি এঁকেছেন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসব ছবিতে ফুটে উঠছে আন্দোলনে যুক্ত থাকা শিক্ষার্থীদের রক্তে রঞ্জিত ইতিহাস। ভোলা পৌরসভার কালিবাড়ী মোড়ে কোর্টের দেওয়ালে, ভোলা সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজের দেওয়ালসহ বিভিন্ন উপজেলায় শিক্ষার্থীরা এই ধরনের গ্রাফিতি আঁকতে দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতে তুলে দরা হয়েছে ‘আমাদের দেশের ভাগ্য আমরাই পরিবর্তন করবো’, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’, ‘এ শহর আর কাঁদবে না, অন্যায় আর থাকবে না’ এমন শ্লোগানে নানা শিল্পকর্মে রেঙে উঠছে ভোলার বিভিন্ন দেওয়াল। শিক্ষার্থীদের রঙ তুলির আঁচড়ে করা ক্যালিওগ্রাফি-গ্রাফিতিতে চোখ আটকে যাচ্ছে শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ সবার। কাঠফাটা রোদে এক হাতে রঙয়ের কৌটো, অন্যহাতে তুলি। মাথা বেয়ে বেয়ে চুয়ে পড়ছে ঘাম। তবুও চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস শিক্ষার্থীদের।
কিছুদিন আগেই এসব দেওয়াল ছিল রাজনৈতিক বিভিন্ন অশোভনীয় শ্লোগান, বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপনে শ্রীহীন। অপরিচ্ছন্ন প্রতিটি দেওয়াল কালো, সাদা, লাল, নীল, হলুদসহ নানা রঙে জল তুলির আঁচড়ে রাঙাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের কারও হাতে ছিল রঙ-তুলি, আবার কেউ কেউ একে অপরকে পান করাচ্ছেন পানি। অনেকেই আবার দেখিয়ে দিচ্ছেন কোথায় কি রঙ, কোন ক্যালিওগ্রাফি করবেন। সবার চোখেমুখেই যেন ছিল বিজয়ের হাসি। আর এই দেওয়াল গুলো নান্দনিক গ্রাফিতি আঁকায় পথচারীরা অবাক চোখে চেয়ে থাকেন। অনেক দাঁড়িয়ে ছবি তুলেন। দেওয়ালগুলোয় চোখ বুলিয়ে দেখা যায়, কোথাও শিক্ষার্থীরা লিখেছেন দেশাত্মবোধক গানের অংশবিশেষ, কোথাও নাগরিক কবি শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’, কোথাও বিদ্রোহী কবির সেই আগুনঝড়া কবিতার ‘বল বীর, বল বীর, বল উন্নত মম শির’, স্বাধীনতা এনেছি সংস্কারও আমরাও করবো। ৩৬ জুলাই ২০২৪, সিনেজট।
শুধু তাই নয়, তাদের দেওয়াল লিখনীতে ঠাঁই পেয়েছিলো, রাজধানীতে আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের পানি বিলিয়ে চলা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মায়াবী মুগ্ধের সেই ডাক, ‘পানি লাগবে, পানি?’। সেইদিন অর্থাৎ গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরা আজমপুর এলাকায় মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ যখন পানির কেস হাতে নিয়ে ক্লান্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে পানি বিতরণ করছিলেন, তখন আন্দোলনকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি চালালে একটি গুলি মুগ্ধর কপালে লাগে। মুহূর্তেই সেই বুলেটে নিঃশেষ হয় তার জীবন। ভোলা সরকারি স্কুলের সামনে গ্রাফিতি আঁকছেন ইমন নামে একজন শিক্ষার্থী উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে উঠলেন, ‘দেশটা আমাদের সবার ভাই। দেশ যেহেতু আমরা স্বাধীন করেছি সেহেতু এ দেশের প্রতিটি স্থাপনা রক্ষা ও এসবের সৌন্দর্য রক্ষার দায়িত্বও আমাদের। এখন থেকে আগের সবকিছু ভুলে আমাদের নয়া উম্মাদনায় দেশ গড়তে হবে। দেশের হয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!