খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাসে ফের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের প্রায় দুই মাস পর আজ রোববার শিক্ষার্থীরা বন্ধ ক্যাম্পাসে ফিরে আবাসিক হলে ওঠার ঘোষণা দেন। অন্যদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৎপর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সকাল ১০টার দিকে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে, প্রবেশপথে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। কেবল পরিচয় নিশ্চিত হলে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। ক্যাম্পাসের আইটি গেটসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। আবাসিক হলগুলো সিলগালা করে তালাবদ্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে একটি মামলা। কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে একজন স্থানীয় ব্যক্তি খুলনার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৮ ফেব্রুয়ারি আসামিরা তাকে মারধর করে সোনার চেইন ছিনিয়ে নিয়েছেন। আদালত খানজাহান আলী থানা পুলিশকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রশাসনের ইন্ধনেই এই মামলার নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘এই মামলা শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন দমনের কৌশল। বাইরের লোককে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করিয়ে শিক্ষার্থীদের দমন করার অপচেষ্টা চলছে।’
জানা গেছে, ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। একই দিন কুয়েট কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয় এবং তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ জন শিক্ষার্থীর নামে মামলা করা হয়।
অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় আবাসিক হলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের সকাল ১০টার মধ্যে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়, যার প্রতিবাদে তারা মিছিল করেন।
এদিকে কুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে ‘লং মার্চ টু কুয়েট’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই কর্মসূচির প্রচারণাও চালানো হচ্ছে।
‘কুয়েট ১৯’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে শিক্ষার্থীদের আজ দুপুর ২টায় প্রধান ফটকে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সবাইকে আইডি কার্ড সাথে রাখারও অনুরোধ করা হয়েছে।
পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন সবার কৌতূহলের বিষয়।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!