আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে কাছে টানতে বিএনপির তৎপরতা বাড়ছে। ইতোমধ্যে দলের শীর্ষ নেতারা একাধিকবার হেফাজতের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল নির্বাচনী সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দল হেফাজতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তবে হেফাজতের আমির বাবুনগরী বারবার প্রকাশ্যে জামায়াতবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি দাবি করেছেন, জামায়াত ‘সহিহ ইসলামী দল নয়’, বরং মওদুদীর আদর্শ অনুসরণ করে, যা প্রকৃত ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
গত বৃহস্পতিবার জামায়াতসহ সাত দলের অভিন্ন কর্মসূচির দিনেই ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলনে বাবুনগরী স্পষ্ট জানিয়ে দেন—কোনো ইসলামি দলকে জামায়াতের সঙ্গে জোট বাঁধা যাবে না। তাঁর বক্তব্য বিএনপির জন্য সুযোগ তৈরি করেছে, বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলোকে আলাদা রাখতে।

তবে হেফাজতের ভেতরে এ নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের আমির হিসেবে বাবুনগরীর এ ধরনের রাজনৈতিক মন্তব্য দেওয়া উচিত নয়। তবে তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ আলেম হওয়ায় প্রকাশ্যে কেউ তার বিরোধিতা করছেন না।
জামায়াতে ইসলামী অবশ্য বাবুনগরীর বক্তব্যকে তাঁর ব্যক্তিগত মত বলে দাবি করছে। দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “আমরা ওনাকে সম্মান করি। তবে ইসলামি ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে—এমন মন্তব্য কোনো খালেস মোমিনের কাছ থেকে কাম্য নয়।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হেফাজতকে সামনে রেখে বিএনপির কৌশল স্পষ্ট। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক ভোটব্যাংক টানতে বিএনপি চায় জামায়াতকে একপাশে রেখে হেফাজত-সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে। বিশেষ করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টির কিছু অংশ ইতোমধ্যে বিএনপির সঙ্গে রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অবশ্য বলেন, “হেফাজতের আমির রাজনীতি করেন না। আমরা তাঁর কাছে শুধু দোয়া চাইতে গিয়েছিলাম।”
সব মিলিয়ে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে হেফাজতের অবস্থান রাজনীতির মাঠে বড় প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!