বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সালমান শাহ এক অবিস্মরণীয় নাম। মৃত্যুর ২৯ বছর পরও তাঁর জনপ্রিয়তা অটুট, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন তিনি। মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে বাংলা সিনেমাকে নতুন ধারায় নিয়ে গিয়েছিলেন এই মহানায়ক। অভিনয় ও স্টাইলের কারণে এখনও তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয় হয়ে আছেন তিনি।
শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা: ‘বুকের ভেতর আগুন’
সালমান শাহের অভিনীত শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘বুকের ভেতর আগুন’। ছটকু আহমেদ পরিচালিত এই সিনেমায় তার বিপরীতে ছিলেন শাবনূর। জানা যায়, এ সিনেমার জন্য সে সময়ের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক, দুই লাখ টাকা নিয়েছিলেন তিনি। তবে দুঃখজনকভাবে, সিনেমার কাজ সম্পূর্ণ শেষ করার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। এরপর গল্পের কিছু পরিবর্তন করে তাঁর জায়গায় ফেরদৌস আহমেদকে যুক্ত করা হয়। সালমানের মৃত্যুর এক বছর পর সিনেমাটি মুক্তি পায়।
মৃত্যুর পরও মুক্তি পেয়েছিল একাধিক সিনেমা
সালমান শাহের মৃত্যু যখন ঘটে, তখন তাঁর হাতে ছিল একাধিক সিনেমার কাজ। অনেকগুলোর ডাবিং চলছিল, কিছু সিনেমার শুটিং প্রায় শেষ, আর কিছু ছিল একেবারে মাঝপথে। মৃত্যুর মাত্র এক সপ্তাহ পর, ১৩ সেপ্টেম্বর, মুক্তি পায় ছটকু আহমেদের পরিচালিত ‘সত্যের মৃত্যু নেই’। নির্মাতাদের পরিকল্পনা ছিল সালমানের জন্মদিনের ছয় দিন আগে এটি মুক্তি দেওয়ার। তবে ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস, সিনেমা মুক্তির আগেই চলে যান না–ফেরার দেশে।
সালমানের মৃত্যুর পর ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তাঁর অভিনীত ছবি একের পর এক মুক্তি পেতে থাকে। ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’—এই ছবিগুলো দর্শকদের আবেগকে আরও গভীর করে তুলেছিল। অসম্পূর্ণ ‘বুকের ভিতর আগুন’ ও ‘প্রেম পিয়াসী’ সিনেমাগুলো শেষ করা হয় অন্য অভিনেতা ও ডামি শিল্পীদের মাধ্যমে। তবে দর্শকরা সবসময়ই সেই জায়গায় সালমানকে খুঁজেছেন।
সময় বদলালেও অমলিন জনপ্রিয়তা
সালমান শাহ ছিলেন সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক। তাঁর সিনেমা মানেই প্রেক্ষাগৃহে উপচে পড়া দর্শক, রেকর্ড সংখ্যক দর্শক সমাগম। আজও ইউটিউবে তাঁর সিনেমার ক্লিপস, গান ও ডায়লগ ভাইরাল হয়। নতুন প্রজন্মও আগ্রহভরে খোঁজে সালমান শাহের কাজ, তাঁর জীবন, তাঁর স্টাইল।
নব্বই দশকের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে তিনি শুধু একজন অভিনেতা নন, বরং এক আবেগের নাম। মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পরও সালমান শাহ রয়ে গেছেন মানুষের মনে, চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক চিরসবুজ কিংবদন্তি হিসেবে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!