পবিত্র কোরআনের ৫৬তম সুরার নাম ‘ওয়াকিয়া,’ যা কিয়ামতের বিষয়টি তুলে ধরে। মক্কায় অবতীর্ণ এই সুরায় মোট ৯৬টি আয়াত রয়েছে। এর শুরুতেই কিয়ামতের ভয়াবহতা এবং জান্নাত ও জাহান্নামের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে।
সুরাটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এতে মানুষের কাছে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রেখেছেন আল্লাহ তাআলা। এই প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে তিনি নিজের সৃষ্টির অসীম ক্ষমতা এবং মানুষের প্রতি তার নেয়ামতগুলো স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহর ৫টি প্রশ্ন
১. মানব সৃষ্টির উৎস:
“তোমরা কি ভেবে দেখেছ, তোমাদের বীর্যপাত সম্বন্ধে? ওটা কি তোমরা সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি?”
(সুরা ওয়াকিয়া ৫৮-৫৯)
আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, মানব সৃষ্টির প্রাথমিক উপাদান বীর্যও তারই কুদরতের ফসল।
২. শস্য উৎপাদন:
“তোমরা যে বীজ বপন কর, সে সম্পর্কে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি ওকে অঙ্কুরিত কর, না আমি অঙ্কুরিত করি?”
(সুরা ওয়াকিয়া ৬৩-৬৪)
জমিতে বীজ বপন করলেও অঙ্কুরোদ্গম এবং শস্য উৎপাদন একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।
৩. পানির উৎস:
“তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে তোমরা চিন্তা করেছ কি? তোমরাই কি তা মেঘ থেকে বর্ষণ কর, না আমি বর্ষণ করি?”
(সুরা ওয়াকিয়া ৬৮-৭০)
আল্লাহ বলেছেন, ইচ্ছা করলে তিনি পানিকে লবণাক্ত করতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেন না, তাই তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।
৪. আগুনের উৎস:
“তোমরা যে আগুন জ্বালিয়ে থাকো, তা লক্ষ্য করে দেখেছ কি? তোমরাই কি ওর বৃক্ষ সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি?”
(সুরা ওয়াকিয়া ৭১-৭৩)
আগুনও আল্লাহর নেয়ামত, যা মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় এবং উপদেশমূলক।
৫. কোরআনের মর্যাদা:
“নিশ্চয়ই এটা সম্মানিত কোরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে (লওহে মাহফুজে)। পূত-পবিত্রগণ ব্যতীত অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না।”
(সুরা ওয়াকিয়া ৭৭-৮১)
আল্লাহ কোরআনের মহত্ত্ব এবং তার বাণীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে আহ্বান জানিয়েছেন।
শিক্ষণীয় বিষয়
সুরা ওয়াকিয়া শুধু কিয়ামতের আলোচনা নয়, বরং আল্লাহর নেয়ামত ও তার সৃষ্টির কুদরতের প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের একটি আহ্বান। এটি মুমিনদের জন্য অনুপ্রেরণার পাশাপাশি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের শিক্ষাও দেয়।
এই সুরার বার্তা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পৃথিবীর প্রতিটি নেয়ামতই আল্লাহর দান। তাই তার প্রতি আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আমাদের কর্তব্য।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!