শীতকাল এলেই শহর-গ্রাম সবখানে ব্যাডমিন্টন খেলার হিড়িক পড়ে যায়। শরীরচর্চার জন্য এই খেলা উপকারী হলেও কিছু ক্ষেত্রে তা ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে হারাম হয়ে যেতে পারে। যেমন, খেলায় জুয়া যুক্ত হলে বা খেলোয়াড়দের পোশাকে পর্দার বিধান লঙ্ঘিত হলে তা নিষিদ্ধ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে এসেছে, আর তা হলো বিদ্যুতের অবৈধ ব্যবহার।
বেশিরভাগ ব্যাডমিন্টন আয়োজনে রাস্তার মেইন লাইন বা সরকারি বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে হাই ভোল্টেজের লাইট জ্বালানো হয়, যা মিটারের মাধ্যমে কারও নামে রেকর্ড হয় না। ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী, এই ধরনের বিদ্যুৎ চুরি অত্যন্ত গর্হিত কাজ। ব্যক্তিগত সম্পদ চুরি যেমন হারাম, তেমনই সরকারি বা জাতীয় সম্পদ চুরি করাও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, “যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো সম্পদ গ্রহণ করবে, সে কেয়ামতের দিন ওই বস্তু নিয়ে উঠবে, যা সে অন্যায়ভাবে হস্তগত করেছিল। তারপর প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে এবং কারও প্রতি জুলুম করা হবে না।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৬১)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই কিছু মানুষ আল্লাহর সম্পদে (রাষ্ট্রীয় সম্পদে) অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করে। তাদের জন্য কেয়ামতের দিন রয়েছে জাহান্নাম।” (বুখারি: ৩১১৮)
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুতের মেইন লাইন থেকে সরাসরি সংযোগ নিয়ে খেলার জন্য শুধু বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো কর্মকর্তার মৌখিক অনুমতি যথেষ্ট নয়। তাদের বিদ্যুৎ বিক্রির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করাই দায়িত্ব। কাউকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো অধিকার তাদের নেই। তাই ব্যাডমিন্টন আয়োজকদের উচিত অনুমতি নিয়ে বৈধ উপায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করা। যদি কেউ অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, তবে তওবা করা এবং ব্যবহৃত বিদ্যুতের মূল্য সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া জরুরি।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কেউ কোনো কিছু নিলে তা ফেরত দেওয়া পর্যন্ত তার দায় থেকে যাবে।” (আবু দাউদ: ১২৬৬)
সুতরাং খেলাধুলা যদি শরীর চর্চার উদ্দেশ্যে হয়, তা অবশ্যই জায়েজ। কিন্তু কোনো ধরনের হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া বা অবৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা কখনোই অনুমোদনযোগ্য নয়। একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে যেকোনো খেলায় অংশগ্রহণের আগে তার বৈধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া এবং সন্দেহ হলে বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ নেওয়া কর্তব্য।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!