শীতকাল এলেই জমে ওঠে ওয়াজ-মাহফিল: ধর্মীয় শিক্ষার উষ্ণ বাতাস
শীতকালের ঠান্ডা হাওয়ায় মুসলিম সমাজে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে শুরু হয় ওয়াজ-মাহফিলের ধুম। এই মৌসুমে ধর্মীয় অনুশাসন পালনের পাশাপাশি সমাজে নৈতিক শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ে। মসজিদ, মাদ্রাসা, বিদ্যালয় এবং খোলা মাঠে হাজারো মানুষ একত্রিত হয়ে ইসলামি বাণী শোনেন।
শীতকাল: ধর্মীয় শিক্ষার সোনালি সময় শীতের ঠান্ডা আবহাওয়া মানুষের মনকে প্রশান্ত করে তোলে, যা ধর্মীয় শিক্ষায় মনোযোগ বাড়ায়। ইসলামের সুমহান বাণী ও কোরআন-হাদিসের ব্যাখ্যা শোনার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মুখিয়ে থাকেন। ইসলামি বক্তারা এই সময় শরিয়তের বিধান, আমলযোগ্য বিষয় এবং সমাজের বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন।
রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শে ওয়াজ-মাহফিল নবী করিম (সা.) বলেন, "তোমরা আমার কাছ থেকে একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও।" (বুখারি, হাদিস: ৩৪৬১)।
বিদায় হজের ভাষণে এক ঐতিহাসিক বক্তব্য দেন রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তখন এক পর্যায়ে বলেন, শোনো! আমি কি তোমাদের নিকট পৌঁছিয়েছি? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন–হে আল্লাহ, তুমি সাক্ষী থাক। (অতঃপর বললেন) উপস্থিত ব্যক্তি যেন (আমার বাণী) অনুপস্থিতের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়। কেননা অনেক প্রচারক এমন ব্যক্তির নিকট (আমার বাণী) পৌঁছাবে,যারা তার চাইতে অধিক সংরক্ষণকারী হবে। (বুখারি শরিফ, হাদিস:৭০৭৮)
ওয়াজ-মাহফিল এই নির্দেশনারই প্রতিফলন। আলেমগণ ইসলামের সঠিক বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেন, সমাজে নৈতিকতা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন।
সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন ওয়াজ-মাহফিল শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আঞ্চলিক ভাষায় ইসলামি বক্তারা সহজবোধ্য ভাষায় ইসলামের বাণী তুলে ধরেন। এতে যুবক-বৃদ্ধ সবাই একত্রিত হন, ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় হয়। সমাজের অনাচার ও অসংগতি দূর করতে এই মাহফিলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সমাজ পরিবর্তনের শক্তি ওয়াজ-মাহফিল সমাজে একতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে। মানুষের নৈতিকতা ও চরিত্র গঠনে সহায়তা করে। এটি কেবল ধর্মীয় শিক্ষা নয়, বরং সামাজিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন। শীতকাল ও ওয়াজ-মাহফিল একে অপরের পরিপূরক, যা সমাজে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!