সৃষ্টির শুরু থেকেই শয়তান মানুষকে নানা কুমন্ত্রণা দিয়ে তার ঈমান দুর্বল করার চেষ্টা করে আসছে। মানুষের জীবনে শয়তানের প্ররোচনা কখনো কখনো বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে মুমিনের জন্য এই কুমন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসা ঈমানকে দৃঢ় করার একটি সুযোগ হয়ে দাঁড়ায়।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদল সাহাবি নবী করিম (স.)-এর কাছে এসে প্রশ্ন করেছিলেন, "আমরা আমাদের অন্তরে এমন কিছু অনুভব করি, যা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা খুবই কঠিন।" নবী করিম (স.) উত্তর দেন, "এটি তোমাদের ঈমানের স্পষ্ট প্রমাণ।" অর্থাৎ, শয়তানের কুমন্ত্রণা অনুভব করলেও তা থেকে বিরত থাকা ও ঈমান বজায় রাখা একটি সৎ মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
বিশেষজ্ঞরা জানান, শয়তানের কুমন্ত্রণা কখনোই মানুষের ঈমানকে শেষ করে দিতে পারে না যদি সে দৃঢ় বিশ্বাস ও আল্লাহর প্রতি আত্মবিশ্বাস বজায় রাখে। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, "মুমিন কখনো কুফরের মতো কুমন্ত্রণায় পতিত হলে তার অন্তর সংকুচিত হয়ে যায়, কিন্তু তার এ চেষ্টা ঈমানের প্রমাণ।"
এ বিষয়ে নবী করিম (স.)-এর নির্দেশ ছিল, "যখন শয়তান কুমন্ত্রণা দেয়, তখন তাকে আমলে পরিণত না করা এবং মুখে উচ্চারণ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তার মনের কুমন্ত্রণা ক্ষমা করে দেন।" এটা নির্দেশ করে যে, শয়তানের কুমন্ত্রণা বা ওয়াসওয়াসার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া দরকার, তবে এর মধ্যে কোনো পাপ নেই।
নবী করিম (স.) আমাদের শিখিয়েছেন শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার উপায়। প্রথমত, এসব মনোভাব থেকে বিরত থাকা এবং আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা। শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মুমিনকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। এই কারণে, "আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতুয়ানির রাজিম; মিনহামজিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফছিহি" দোয়া পাঠ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একদিকে, শয়তান মানুষের ঈমান দুর্বল করতে চায়, অন্যদিকে, মুমিনরা এই প্ররোচনার বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের ঈমানকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। বিশেষত, আল্লাহর দিকে ফিরে গিয়ে, তার সন্তুষ্টি লাভের জন্য ইবাদত করা মুমিনের জন্য এক শক্তিশালী অস্ত্র।
এছাড়া, বাড়িতে নফল নামাজ পড়া এবং "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম" বলে মালামাল সংরক্ষণ করা মন্দ প্রভাব থেকে নিরাপদ রাখে।
এভাবে, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে ঈমানকে শক্তিশালী করে তোলা আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!