টঙ্গী, গাজীপুর: প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমা বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মহাসমাবেশের উপলক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। এটি হজের পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত। টঙ্গীর তুরাগ তীরে লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান একত্রিত হন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে, ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ ও প্রচারের জন্য।
বিশ্ব ইজতেমার তাৎপর্য ও গুরুত্ব
"ইজতেমা" আরবি শব্দ, যার অর্থ সম্মেলন, সভা বা সমাবেশ। "বিশ্ব ইজতেমা" বাংলা ও আরবি শব্দের সংমিশ্রণে গঠিত, যার এককথায় অর্থ দাঁড়ায় "সকলের একসাথে হওয়া"। এটি এমন এক মহামিলনমেলা যেখানে সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা একত্রিত হন ইসলামের শিক্ষা অর্জনের জন্য।
এখানে নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সবাই একই কাতারে নামাজ আদায় করেন, ইসলামের মৌলিক শিক্ষায় দীক্ষিত হন এবং নিজেদের চরিত্র সংশোধনের জন্য আত্মজিজ্ঞাসার সুযোগ পান।
আধ্যাত্মিক পরিবর্তনের বাতাস
বিশ্ব ইজতেমার আলোচনায় ফুটে ওঠে ঈমানদারদের আদর্শ, উম্মতে মুহাম্মাদির দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং ইসলামের সৌন্দর্য। এখানে যারা আসেন, তাদের অনেকেই নতুন করে জীবনের সঠিক পথ খুঁজে পান। কত যুবক এখানে এসে তওবা করে নতুনভাবে জীবন শুরু করেন, কত স্ত্রী ফিরে পান স্বামীকে, কত মা ফিরে পান তার হারানো সন্তানকে, কত বাবা ফিরে পান তার আদর্শ উত্তরসূরি।
বিশ্ব ইজতেমা শুধু ধর্মীয় দীক্ষার ক্ষেত্র নয়, এটি মানবিকতা ও সৌহার্দ্যের এক মহান প্রতীক। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ একত্রিত হয়ে দ্বীনের আলোয় আলোকিত হন।
ইজতেমার তিন দিনের কর্মসূচি ও আখেরি মোনাজাত
বিশ্ব ইজতেমা সাধারণত দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। সকাল-সন্ধ্যার ধারাবাহিক আলোচনায় ঈমান-আকিদার গুরুত্ব, আমলের পথনির্দেশনা ও দাওয়াতি কার্যক্রম সম্পর্কে দীক্ষা দেওয়া হয়। শেষ দিনের আখেরি মোনাজাত লাখো মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা আল্লাহর দরবারে কাঁদেন, নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা চান এবং মানবতার শান্তি কামনা করেন।
তাবলিগ জামাতের ভূমিকা ও দাওয়াতি কার্যক্রম
বিশ্ব ইজতেমা কেবল একত্রিত হওয়ার স্থান নয়, এটি ইসলামের প্রচার-প্রসারের এক বিশাল মাধ্যম। এখান থেকে দাওয়াতি কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়া হয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিশ্বের নানা প্রান্তে। প্রতিবারের ইজতেমার পর শত শত জামাত আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে পড়েন ইসলামের বার্তা মানুষের দ্বারে পৌঁছে দিতে।
ইজতেমার সমাপ্তি ও আগামীর প্রত্যাশা
প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমা বিশ্ববাসীর শান্তি ও কল্যাণের দোয়ার মাধ্যমে শেষ হয়। প্রত্যাশা করা যায়, এই মহতী আয়োজন যুগ যুগ ধরে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দেবে এবং মানবতার কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আল্লাহ যেন এই বিশ্ব ইজতেমাকে কিয়ামত পর্যন্ত হেদায়াতের মাধ্যম হিসেবে কবুল করেন আমিন
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!