দরুদ পাঠ মুসলমানদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এর অসীম ফজিলতের কথা উল্লেখ রয়েছে। কোনো কোনো ফকিহের মতে, জীবনে অন্তত একবার দরুদ পাঠ করা ফরজ। বিশেষ করে যখন কোনো সভা-সমাবেশে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নাম উচ্চারিত হয় বা শোনা যায়, তখন অন্তত একবার দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব।
মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে দরুদ পাঠ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন:
اِنَّ اللّٰهَ وَ مَلٰٓئِکَتَهٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ ؕ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡهِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا
অর্থ: নিঃসন্দেহে আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতারা নবীর ওপর দরুদ পাঠান। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর ওপর দরুদ পাঠাও এবং উত্তম অভিবাদন (সালাম) পেশ করো। (সুরা আহজাব: ৫৬)
দরুদ পাঠের বরকতসমূহ
১. আল্লাহর রহমত লাভ:
হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি দশবার রহমত নাজিল করেন।’ (মুসলিম: ৩৮৫)
২. ফেরেশতাদের দোয়া:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে, যতক্ষণ সে দরুদ পাঠরত থাকে, ততক্ষণ ফেরেশতাগণ তার জন্য দোয়া করতে থাকেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৯০৭; মুসনাদে আহমাদ: ২/১৮৭)
৩. পাপমোচন ও মর্যাদা বৃদ্ধি:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, তার জন্য আল্লাহ তাআলা দশটি রহমত বর্ষণ করেন, তার দশটি পাপ মোচন করেন এবং তার মর্যাদা দশ ধাপ উন্নীত করেন।’ (মুসনাদে আহমাদ: ৪/২৯; নাসায়ী: ১২৯৭)
দরুদ পাঠের সর্বোচ্চ গুরুত্ব
হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, দোয়ার কত ভাগ দরুদ পাঠে নির্ধারণ করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তরে বলেন, ‘তোমার ইচ্ছা অনুযায়ী। তবে বেশি করলে আরও ভালো।’
যখন তিনি দোয়ার পুরোটা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠে উৎসর্গ করার কথা বললেন, তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘তাহলে তোমার উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে, আর তোমার গুনাহ মাফ করা হবে।’ (তিরমিজি: ২/৭২)
উপসংহার
পবিত্র কোরআনের নির্দেশ এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস অনুযায়ী, দরুদ পাঠ শুধু ইবাদতের অংশ নয়, বরং এটি রহমত, বরকত ও পাপমোচনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। যারা নিয়মিত দরুদ পাঠ করেন, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর নিকট থেকে বিশেষ পুরস্কার লাভ করবেন।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!