পৃথিবী ও মহাবিশ্বের ধ্বংস এবং কেয়ামতের দিন সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বারবার কোরআনে উল্লেখ করেছেন। তাঁর আদেশে মানুষকে স্মরণ করানো হয়েছে যে, এই পৃথিবী নশ্বর এবং একদিন সবাইকে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে ফিরতে হবে। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যখন কেয়ামতের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন আল্লাহ তাআলা ওহি নাজিল করে বলেন, কেয়ামত নির্দিষ্ট সময়ে হবে, যার ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। (সুরা হা-মিম-সাজদা ৪৭)
কেয়ামতের বড় ও ছোট আলামত
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেয়ামতের দিন সম্পর্কে বিভিন্ন আলামত বর্ণনা করেছেন, যাতে তাঁর উম্মত সতর্ক হতে পারে। কিছু ছোট আলামত ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হলেও, বড় আলামত এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে ছোট আলামতগুলোর মধ্যে ধীরে ধীরে কিছু পরিবর্তন দৃশ্যমান হচ্ছে।
ফুরাত নদীর শুকিয়ে যাওয়া: স্বর্ণের পাহাড়ের উন্মোচন
ফুরাত নদীর পানি হ্রাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে বেশ আলোচনা চলছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, অচিরেই ফুরাত নদী শুকিয়ে যাবে এবং এর থেকে স্বর্ণের পাহাড় উন্মোচিত হবে। যা নিয়ে মানুষ যুদ্ধ করবে এবং শতকরা ৯৯ জন মারা যাবে। (বুখারি ৭১১৯) এটি একটি বড় আলামত, যা কেয়ামতের আগে ঘটবে।
মদ্যপান, ব্যভিচার ও নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি হাদিসে কেয়ামতের ছোট আলামত সম্পর্কে বলেছেন যে, অজ্ঞতা, ব্যভিচার, মদ্যপান, পুরুষের সংখ্যা কমে নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এমনকি পঞ্চাশ জন নারীর দায়িত্ব পালন করবে একজন পুরুষ। (বুখারি ৫৫৭৭)
আরব ভূখণ্ডের সবুজ হয়ে যাওয়া
আরব ভূখণ্ড, বিশেষত মক্কা-মদিনার খালি অঞ্চলগুলোর সবুজ হয়ে যাওয়ার কথা নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন। ২০২৩ সালে সৌদি আরবে এমন ছবি দেখা গেছে যেখানে মক্কা ও মদিনার কিছু অঞ্চল সবুজ হয়ে উঠেছে, যা আগে কল্পনাও করা যেত না।
অন্যান্য আলামত: সুদ, গোলযোগ ও মিথ্যা নবুয়ত দাবি
এছাড়া সুদ, গোলযোগ, মিথ্যা নবুয়তের দাবিদারদের আবির্ভাব, মানুষের আকৃতি রূপান্তর, ভূমিধস ও আকাশ থেকে পাথর পড়া কেয়ামতের আলামত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে, ‘হরমোনাল রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি’ এর মাধ্যমে পুরুষ থেকে মহিলা বা মহিলা থেকে পুরুষ হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা এই আলামতের বাস্তবায়ন হিসেবে দেখা যেতে পারে।
কেয়ামতের দিন কেমন হবে?
কেরামতের দিন মানুষের সামনে তাদের আমল সম্পর্কে বিচার হবে এবং পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। সেই দিন হবে মানুষের জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ এবং চূড়ান্ত দিন। নবীজির বর্ণিত এসব আলামত আমাদের জন্য সতর্কবার্তা, যাতে আমরা ঈমানদারি ও তওবার পথে চলতে পারি এবং কেয়ামতের প্রস্তুতি নিতে পারি।
এটি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা যে, কেয়ামত কখন হবে তা জানার চেয়ে তার প্রস্তুতি নেওয়া অধিক জরুরি।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!