আজ ২৫ মার্চ, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিভীষিকাময় কালরাতের স্মৃতিচারণ। ১৯৭১ সালের এই দিনে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারা দেশে এক নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। নিরস্ত্র বাঙালি জনগণের ওপর হামলা, গণহত্যা এবং ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের মধ্য দিয়ে পৈশাচিকভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত ছাত্র-শিক্ষক, পুলিশ ও সাধারণ মানুষদের হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। এটি ছিল 'অপারেশন সার্চলাইট', একটি বর্বর অভিযান যা পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত।
দুর্গতিপূর্ণ এই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা, রাজারবাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালানো হয়। গণহত্যার পৈশাচিকতায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন লাগানো হয়। ২৫ মার্চ এক রাতে প্রায় অর্ধলাখ নিরীহ বাঙালির জীবন শেষ হয়। সেই অগ্নিগর্ভ রাতে যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের স্মরণে আজ সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
গণহত্যা দিবস উপলক্ষে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকাসহ সারা দেশে পৃথিবীর সবচেয়ে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায়। তিনি শহীদদের স্মরণ করে বলেন, তাদের আত্মদান ও সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, "নতুন বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে—গণহত্যা দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।"
এদিনের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে, সারা দেশে রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত এক মিনিটের প্রতীকী ব্ল্যাকআউট পালিত হবে। একইসঙ্গে, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও গণহত্যার স্মৃতিচারণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে ‘ভুলি নাই ভুলি নাই মৃত্যু মিছিল: জেনোসাইড একাত্তর দায়বদ্ধতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম’ শীর্ষক আলোচনাসভা ও আলোক প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এছাড়াও, বাংলা একাডেমি আজ বিকেল ৩টায় সেমিনারের আয়োজন করেছে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে।
আজকের এই দিন, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, দেশের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে, যখন নিরীহ মানুষদের উপর বর্বর হামলা চালানো হয়েছিল এবং স্বাধীনতা অর্জনের জন্য লাখ লাখ মানুষের রক্ত ঝরেছিল।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!