হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা এলাকার হাওর থেকে এক কিশোর ইজিবাইক চালকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার(১১জানুয়ারি)আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ৫নং শিবপাশা ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর হাওর এলাকা থেকে বেলা- ১২টার দিকে আজমিরীগঞ্জ থানা পুলিশ এই চালক কিশোরের লাশটি উদ্ধার করেন।
উদ্ধার হওয়া ইজিবাইক কিশোর চালকের প্রথমে সঠিক পরিচয় পাওয়া না গেলেও বানিয়াচং উপজেলার এই কিশোরটি বলে এলাকাবাসী ও উপস্থিত লোকজনের কাছ থেকে শুনাযায়।
লাশ উদ্ধারের কিছুক্ষণ পর আজমিরীগঞ্জ থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের ব্যস্ততায় কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে শিবপাশা ইউপি চেয়ারম্যান নলিউর রহমান এর মুঠোফোনে বেলা ৪টা ২০মিনিটের দিকে যোগাযোগ করা হলে,তিনি এই লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,এমন একটি সংবাদ আমিও পেয়েছিলাম।
তাৎক্ষণিক বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করি এবং নিজেও হাওরের দিকে রওয়ানা দিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে এমনটা দেখতে পাই। এলাকাবাসীসহ আশপাশের শত,শত লোকজন জুড়ো হতে থাকেন সেখানে। লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারি ঐ ছেলেটির বাড়ি বানিয়াচং এবং সে ইজিবাইক মিশুক গাড়ি চালাতো। তাই ধারণা করা হচ্ছে মিশুক গাড়িটি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য এই ছোট্ট ছেলেটাকে হত্যা করেছে ঘাতকেরদল।
এদিকে ঘটনাস্থলে আজমিরীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ উপস্থিত হয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে লাশটি উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। এছাড়াও এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করে যাচ্ছেন আজমিরীগঞ্জ থানা পুলিশসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা ও সদস্যগন। পুলিশ বাহিনীর সঠিক তদন্তের মাধ্যমেই বেড়িয়ে আসতে পারে প্রকৃত ঘটনাটি কারা গাড়িটি ছিনিয়ে নিয়ে এই কিশোর যুবকটাকে হত্যা করেছে।
এব্যাপারে তিনি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে গাড়িটি উদ্ধার পূর্বক জড়িতদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার মতামত ও প্রকাশ করেন। অন্যদিকে বানিয়াচংয়ের এই যুবকের পরিচয় জানতে উপজেলার সদরের ২নং উত্তর পশ্চিম ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের চানপাড়া মহল্লার ইউপি(সদস্য)মেম্বার জিতু মিয়ার সাথে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে,তিনি এই ঘটনায় নিহত যুবকের পরিচয় নিশ্চিত করে জানান,ছেলেটি তার ওয়ার্ডের এলাকার পাশাপাশি বাসিন্দ।
তাই এমন সংবাদ পাওয়ার পর তিনি আজমিরীগঞ্জ থানায় চলে যান এবং বর্তমানেও অবস্থান করছেন বলে জানান।
দুপুরের দিকে শাহজাহান এর এমন সংবাদটি জানতে পারেন পরিবারের লোকজন।
তাই শাহজাহানের মা,বাবা ও আত্বীয় স্বজনগন অনেকেই চলে যান আজমিরীগঞ্জ থানায় ও কেউ কেউ ছুটে চলেন ঘটনাস্থলে। তারা সেখানে গিয়ে তাদের সন্তান শাহজাহান এর লাশ এটি নিশ্চিত করেন। পরে থানা পুলিশ বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে হাওর থেকে লাশটি উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। তিনি লাশটি আজ আনার বিষয়ে থানা পুলিশের সাথে আলাপ আলোচনাও করেছিলেন।
কিন্তু থানা পুলিশ জানিয়েছে আজকে ময়নাতদন্তের কাজ শেষ হবেনা তাদের আইনী জটিলতা ও কাজকর্ম রয়েছে।
তাই আগামীকাল(শুক্রবার)শাহজাহান এর লাশের পোস্টমর্টেম এর কাজ শেষ করে বানিয়াচংয়ের তার বাড়িতে নিয়ে আসা হবে।
ময়না তদন্তের কাজ শেষ করে বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। নিহত যুবক চানপাড়া মহল্লার বশীর মিয়ার পুত্র শাহজাহান(১৪) মিয়া। তাদের সংসারে মা,বাবা ও ৩ ভাই ছোট্ট দু'বোন নিয়ে ৭ সদস্য বিশিষ্ট সংসার নিয়ে বসবাস করে আসছিলো পরিবারটি। ৩ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ভাইটি প্রতিবন্ধী হওয়ায় কোন কাজ কর্ম করে রোজগার করতে পারে নাই। নিহত শাহজাহান ছিলো সবার ছোট্র। তাই শাহজাহান তার মেজো ভাই মিলে কাজকর্ম করে রোজগার করে সংসার চালিয়ে আসছিলো।
সবার ছোট্র শাহজানকে পরিবারের লোকজন ঋন করে এই মিশুক গাড়িটা ক্রয় করে দিয়েছিলেন বলেও জানা যায়।
পড়ালেখার বয়সেই সংসারে সহযোগীতার জন্য দু'টি পয়সা রুজকার করে সবাইকে নিয়ে সুন্দর ভাবে চলার জন্য।
কিন্তু ২ বছরের ভিতরেই গাড়িটা ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করে নিলো ঘাতকরা।
দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সচেতন মহলের লোকজনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করছেন। আজও প্রতিদিনের ন্যায় বাড়ি থেকে সকাল ৮টার দিকে গাড়িটি নিয়ে বের হয়েছিলো শাহজাহান। কিন্তু হাওরের মধ্যে লাশ হয়ে পড়ে থাকার খবর আসলো দুপুরের দিকে পরিবারের কাছে।
নিহত শাহজাহানের হত্যাকান্ডের ঘটনায়,তার মা,বাবা ও পরিবারের লোকজনের কান্নায় আজমিরীগঞ্জে ও বাড়িতে এক আকাশ ভারী উঠছে।
ইউপি সদস্য জিতু মিয়া এই ঘটনার জড়িত ঘাতকদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারসহ দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট জোরদাবী জানিয়েছেন।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!