ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের অপ্রত্যাশিত জয় অনেককে অবাক করেছে। কেউ কেউ একে বহুদলীয় প্রতিযোগিতার পুনর্জন্ম হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে শঙ্কিত এই ভেবে যে জামায়াতপন্থী ছাত্র সংগঠনের এ সাফল্য ভবিষ্যতের জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রশ্ন উঠছে—এই সাফল্য কি জামায়াতে ইসলামীকে জাতীয় নির্বাচনে নতুন সুবিধা এনে দেবে?
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন বিতর্কিত। স্বাধীনতার পর দলটি নিষিদ্ধ থাকলেও ১৯৭৫–পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসনের পটপরিবর্তনে তারা ধীরে ধীরে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়। জিয়াউর রহমানের আমলে পাকিস্তান থেকে গোলাম আজমের প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
এরপর থেকেই জামায়াত সামাজিক কার্যক্রম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তার ও ছাত্রশিবিরকে সংগঠিত করার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে থাকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে ঢাবি–জাহাঙ্গীরনগরে তাদের কার্যক্রম ধীরে ধীরে বিস্তৃত হয়।
ডাকসু–জাকসুতে সাফল্যের মানে কী?
শিবিরের জয় হঠাৎ করে ঘটেনি—এটি চার দশকের সাংগঠনিক কাজের ফল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ জয় আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাফল্য—দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বাস্তবতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ছাত্র সংসদে শিবিরের প্রভাবশালী উপস্থিতি তাদের রাজনৈতিক শক্তির ইঙ্গিত দিলেও এর ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের ব্যাপক সাফল্য কল্পনা করা বাড়াবাড়ি হবে।
জাতীয় নির্বাচনে সম্ভাবনা
বাংলাদেশের জনগণ ভোট দেওয়ার সময় কেবল আদর্শ নয়, নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং জাতীয় স্বার্থে নীতি–পদক্ষেপ বিবেচনা করে। জামায়াত বিগত কয়েক দশকে কিছু আসন জিতলেও জাতীয় রাজনীতিতে কখনো এককভাবে প্রধান শক্তি হয়ে উঠতে পারেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারা কৌশলগতভাবে জোটে অংশ নিয়ে আবারও সংসদে প্রবেশ করতে পারে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার মতো অবস্থানে এখনো পৌঁছায়নি।
ডাকসু–জাকসুতে শিবিরের জয় জামায়াতকে সংগঠনগতভাবে উজ্জীবিত করেছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে এটি সরাসরি বিজয়ের নিশ্চয়তা নয়। বরং জামায়াত সংসদে একটি শক্তিশালী বিরোধী কণ্ঠ হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে সরকার গঠনের ক্ষমতা অর্জন এখনো তাদের নাগালের বাইরে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!