বার্তা প্রেরকঃ মোঃ বায়েজিদ।। বাংলাদেশে, ১৯৭২ সালের সংবিধানে (প্রধানত তৃতীয় ভাগে) নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষার জন্য উচ্চ আদালতকে (হাইকোর্ট বিভাগ) রিট মামলা শুনানির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। নিম্নে রিট মামলার প্রাসঙ্গিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ব্যাখ্যা করা হলো:
সংবিধানের তৃতীয় ভাগে উল্লেখিত মৌলিক অধিকার
বাংলাদেশের সংবিধানের ২৬ থেকে ৪৭ অনুচ্ছেদে বিভিন্ন মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত রয়েছে, যেমন:
সমতার অধিকার (অনুচ্ছেদ ২৭)
বাক স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ ৩৯)
ব্যক্তি স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা (অনুচ্ছেদ ৩২)
ধর্মীয় স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ ৪১)
যদি কোনো ব্যক্তি মনে করেন যে তাদের এই মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, তবে তারা উচ্চ আদালতে রিট মামলা করতে পারেন।
রিট মামলার বিভিন্ন প্রকার
রিট মামলা প্রধানত পাঁচ প্রকারের হয়:
হেবিয়াস কর্পাস (Habeas Corpus):
যদি কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে আটক হন বা তাঁর স্বাধীনতা অন্যায়ভাবে ক্ষুণ্ন করা হয়, তবে হেবিয়াস কর্পাস রিটের মাধ্যমে তাঁকে আদালতে হাজির করার আদেশ দেয়া হয়, যাতে আদালত বিচার করতে পারে আটকটি বৈধ ছিল কিনা।
ম্যান্ডামাস (Mandamus):
এটি এমন একটি রিট, যা কোনও সরকারি কর্মকর্তা বা সংস্থাকে তাঁদের আইনি দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিতে আদালত দ্বারা জারি করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো কর্তৃপক্ষ যদি তাঁদের আইনগত কর্তব্য পালন করতে ব্যর্থ হন বা ইচ্ছাকৃতভাবে দায়িত্ব এড়িয়ে যান, তবে এই রিট ব্যবহার করা হয়।
প্রোহিবিশন (Prohibition):
এই রিটটির মাধ্যমে আদালত নিম্ন আদালত বা কোনো প্রশাসনিক সংস্থাকে কোনো কাজ সম্পাদন করা থেকে বিরত থাকার আদেশ দেন, যদি সেই কাজের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় বা সেটি তাদের আইনগত ক্ষমতার বাইরে হয়।
কোয়ারেন্টো (Quo Warranto):
এই রিটের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে কোনো সরকারি পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। আদালত দেখতে চায়, সেই ব্যক্তির কীভাবে এবং কোন যোগ্যতায় সে পদটি দখল করেছেন।
সাটোরারি (Certiorari):
নিম্ন আদালত বা প্রশাসনিক সংস্থা যদি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয় বা তাদের আইনগত ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তবে উচ্চ আদালত সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য সাটোরারি রিট জারি করে।
রিট মামলা দায়েরের শর্তাবলী:
ক্ষতির শিকার হওয়া ব্যক্তি: সাধারণত, রিট মামলা শুধুমাত্র সেই ব্যক্তি করতে পারেন, যার মৌলিক অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সরকারি সংস্থা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে: রিট সাধারণত সরকারি সংস্থা বা সরকারি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার বিরুদ্ধে করা হয়।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র: রিট মামলা দায়েরের জন্য যথাযথ নথি এবং প্রমাণাদি থাকা আবশ্যক।
রিটের গুরুত্ব:
মানবাধিকার সুরক্ষা: রিটের মাধ্যমে ব্যক্তির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকার পাওয়া যায়।
সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার প্রতিরোধ: যদি কোনো সরকারি সংস্থা বা ব্যক্তি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, তবে রিট মামলা দায়েরের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করা যায়।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা: রিট আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রাখে, কারণ এটি সরকারি কাজকর্মের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।
রিট মামলা ফাইল করার প্রক্রিয়া:
আদালতে আবেদন: সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে উচ্চ আদালতে একটি আবেদন দাখিল করতে হয়।
প্রাথমিক শুনানি: আদালত প্রাথমিকভাবে আবেদনটি বিবেচনা করবে এবং গ্রহণযোগ্য মনে হলে তা শুনানির জন্য গ্রহণ করবে।
আদেশ জারি: শুনানি শেষে যদি আদালত আবেদনকারীর পক্ষে রায় দেন, তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদেশ জারি করা হয়।
বাংলাদেশে রিট মামলার উদাহরণ:
বাংলাদেশের আদালতগুলোতে বহু রিট মামলা করা হয়েছে, যেমন মানবাধিকার রক্ষার জন্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অব্যবস্থাপনা, পরিবেশ দূষণ বন্ধে এবং নির্বাচনী অনিয়ম প্রতিরোধে।
লেখক
শামসুল আরেফিন
শিক্ষার্থী আইন বিভাগ।
বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!