বাংলাদেশের সঙ্গে একটি বিশেষায়িত প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে আগ্রহ জানিয়েছে জাপান। চলতি বছরের মধ্যেই চুক্তি সইয়ের প্রাথমিক উদ্যোগ চলছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
কূটনৈতিক মহলের তথ্য অনুযায়ী, চুক্তিটি কার্যকর হলে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও যৌথ গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ–জাপান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নতুন মাত্রা পাবে।
গত মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস টোকিও সফরে গিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে বৈঠক করেন। সে বৈঠকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উঠে আসে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আলোচনার ধারাবাহিকতায় নীতিগতভাবে দুই দেশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও সমরাস্ত্র বিনিময় চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।
এর আগে ২০২৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ ও জাপান প্রতিরক্ষা সহযোগিতাবিষয়ক সম্মতিপত্রে সই করেছিল। ওই সময় থেকেই বিস্তারিত চুক্তির প্রস্তুতি চলছিল।
চুক্তির মূল কাঠামো
জাপানের প্রতিরক্ষা নীতি অনুযায়ী প্রস্তাবিত চুক্তিতে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে—
১. প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম হস্তান্তর: নৌ টহলযান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, নজরদারি প্রযুক্তি ও অপ্রাণঘাতী সামরিক সরঞ্জাম।
২. যৌথ গবেষণা: সাইবার নিরাপত্তা, স্যাটেলাইট প্রযুক্তি, উপকূলীয় নজরদারি।
৩. নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা: সরবরাহকৃত সমরাস্ত্র তৃতীয় কোনো দেশে হস্তান্তর বা সীমার বাইরে ব্যবহার করা যাবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব উদ্যোগ বাংলাদেশকে সাইবার প্রতিরক্ষা ও সামুদ্রিক নিরাপত্তায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ করে দেবে। তবে চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে নতুন এই চুক্তি ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
জাপানের সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি নীতির শিথিলতার পর তারা এশিয়ার বিভিন্ন দেশে নতুন বাজার খুঁজছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকেও সম্ভাব্য অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছে টোকিও। আর্থিক সহায়তার ভিত্তিতে সমরাস্ত্র বিক্রির প্রস্তাবও জাপানের পক্ষ থেকে আলোচনায় এসেছে।
বিআইপিএসএস প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ. ন. ম. মুনীরুজ্জামান মনে করেন, এ চুক্তি শুধু সমরাস্ত্র নয়, প্রযুক্তিগত সহায়তাও নিশ্চিত করবে, যা সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে।
২০১৩ সাল থেকে জাপান যুক্তরাজ্য, ভারত, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও মঙ্গোলিয়াসহ একাধিক দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১১টি দেশের সঙ্গে ২০টি প্রতিরক্ষা এমওইউ সই করেছে। সর্বশেষ এই আগস্টে মালয়েশিয়ার সঙ্গে একটি সমঝোতা হয়।
সব মিলিয়ে প্রস্তাবিত বাংলাদেশ–জাপান প্রতিরক্ষা চুক্তি সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে সহায়ক হলেও আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় কৌশলগত চ্যালেঞ্জও তৈরি করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!