নিউজ ডেস্ক।। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সরকারি দপ্তরের সুবিধাভোগী রাক্ষুসে সাংবাদিকদের হামলা ও লাঞ্ছিতের অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার চেস্টা করেছিলেন পিরোজপুরের এখন টেলিভিশন'র প্রতিনিধি ইমন চৌধুরী।
বুধবার ২০ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে সে স্থানীয় প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হয়ে ঘরে ফিরে ফেইসবুকে লাইভ দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা শুরু করে। ফেসবুকের লাইভ দেখে পরিবারের লোকজন তার রুমের দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন।
ইমন এখন পিরোজপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে শারীরিক অবস্থা ভালো নয় এবং নিরাপত্তাহীন বলে তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলা পোর্টালকে জানিয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনায় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আহমেদ আবু জাফর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় সরকারি মাসোয়ারাপ্রাপ্ত রাক্ষুসে সাংবাদিক দ্বারা প্রতিনিয়ত পেশাদার সাংবাদিকদের কাজে বাধাগ্রস্থ করে আসছে। পেশার সহকর্মী দ্বারা এমন নিষ্ঠুর, নির্মম ঘটনাটিকে ব্যভিচার বলে আমরা মনে করি। ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের দাবি দাবি জানাই। যাতে করে এভাবে একজন সাংবাদিক আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে না যায়।
সূত্র জানিয়েছে, পিরোজপুর এলজিইডির এক অফিস স্টাফের স্ত্রীর নামে কোটি টাকার টেন্ডার বেআইনিভাবে হাতিয়ে নেন। এ সংবাদকে কেন্দ্র করে প্রেসক্লাবের দায়িত্বশীল নেতারা বুধবার বিকেল থেকে ইমনকে মোবাইল ফোনে প্রেসক্লাবে যেতে নির্দেশ করেন। ইমন তখন কম্পিউটারে সংবাদ লেখার কাজে ব্যস্ত থাকায় পড়ে যাবে বলে নেতাদের আশ্বস্ত করেন। কিন্তু ওই নেতারা ধৈর্য না করে ধরে ইমনের ঘরে এসে ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে প্রেসক্লাবে নিয়ে বেদম মারধর ও লাঞ্ছিত করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইমন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি’র পিরোজপুর জেলা কর্যালয়ের উচ্চমান সহকারী মৃণাল কান্তি দাসের বিরুদ্ধে ঠিকাদারী কাজ করার উপর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করে। যেটি ভালোভাবে নেয়নি নিয়মিত মাসোহারা পাওয়া পিরোজপুরের সিনিয়র সাংবাদিক নেতারা।
সম্প্রতি আইআরআইডিপি প্রকল্পের প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ টাকার একটি রাস্তার কাজ পায় ‘রায় কনস্ট্রাকশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। রায় কনস্ট্রাকশনের লাইসেন্সটির প্রোপ্রাইটর ঘাটলে দেখা যায় এলজিইডি’র কর্মকর্তা মৃণাল কান্তি দাসের স্ত্রী রিনা রানী মন্ডলের নাম এবং লাইসেন্সটির প্রোপ্রাইটরে যে মোবাইল নাম্বারটি দেওয়া হয়েছে সেটি মৃণাল কান্তির নিজেরই নাম্বার। শুধু তাই নয় এ কাজের টেন্ডারের লটারী নিয়েও রয়েছে এলজিইডি’র ঠিকাদারদের বিভিন্ন অভিযোগ।
ঠিকাদার মোঃ আব্দুল আলিম জানান, গত ১২ ই সেপ্টেম্বর দুপুরে এলজিইডি’র জেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে টেন্ডারের লটারী হয়। যা আমরা কেউ জানিনা বা কোনো ঠিকাদার উপস্থিত ছিলো না। একজন সহকারী প্রকৌশলী তার অফিসে কোনো ঠিকাদারের উপস্থিতি ছাড়াই লটারী করেছেন এবং সেই সময় উচ্চমান সহকারী মৃণাল কান্তি দাসও উপস্থিত ছিলেন। তাহলে তো এখানে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে টেন্ডারে অনিয়ম হয়েছে। পিরোজপুর এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী একজন দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা। তার আমলেই যতসব দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে। এলজিইডি’র কার্যালয় ঘিড়ে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
আরেক ঠিকাদার মোঃ মুরাদ বলেন, এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তারের কাছে আমরা ঠিকাদাররা অসহায়। তিনি যত অনিয়মের মূল হোতা। এলজিইডিতে চাকুরি করে এমন কর্মকর্তা কিভাবে ঠিকাদারী লাইসেন্স করলো এবং সে কোটি টাকার কাজ পেল। নিশ্চয় এখানে নির্বাহী প্রকৌশলীর হাত আছে। আমরা এই আইআরআইডিপি প্রকল্পের টেহুারটি বাতিল করে নতুন ভাবে করার দাবি জানাচ্ছি এবং এই দুর্নীতিগ্রস্থ প্রকৌশলীর পদত্যাগ ও বদলী দাবি করছি।
এদিকে সরকারি কর্মকর্তা ঠিকাদারী কাজ পাওয়ার বিষয়ে এলজিইডি’র সহকারী প্রকৌশলী ফজলে রাব্বি বাংলা পোর্টালকে জানান, টেন্ডারের লটারীতে কোনো অনিয়ম হয়নি। লটারীর সময় আমরা ঠিকাদারদের ডাকছিলাম,তারা কেউ আসেনি।
আর এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার এবিষয়ে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঠিকাদারী লাইসেন্স তা আমার জানা নেই। যদি এমনটা হয়ে থাকে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!