স্টাফ রিপোর্টার - ইমরান হক।।
দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের কাছ থেকে বৃহৎ দুটি সেতু নির্মাণে অর্থায়ন চেয়েছে বাংলাদেশ। যার পরিমাণ ৩৩ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা (৩১০ কোটি ডলার)। এই সেতু প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে আঞ্চলিক সংযোগে আমূল পরিবর্তন আসবে, অর্থনীতিতেও হবে উল্লেখযোগ্য গতি সঞ্চার। অর্থায়ন নিশ্চিত হলে প্রকল্পগুলো ২০৩৩ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, গত ২৫ জুন প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাবনা – পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কমিশন প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করছে। তারা আরও জানান, এরই মধ্যে ৪ আগস্ট মেঘনা সেতু নির্মাণ নিয়ে সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) কাঠামোর পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চাঁদপুর-শরীয়তপুর সেতু
প্রথম প্রকল্প হলো শরীয়তপুর–চাঁদপুর সেতু, ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুটি মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত হবে। এর আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। সেতুটি নির্মাণ হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা সরাসরি যুক্ত হবে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলার সঙ্গে। ফেরীতে পারাপারের বর্তমান অনির্ভরযোগ্য ব্যবস্থার বিকল্প তৈরি হবে, এবং সড়কপথে চট্টগ্রামের সঙ্গে খুলনার দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার হ্রাস পাবে। এতে ঢাকার ওপর যানবাহনের চাপও অনেকাংশে কমে যাবে।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুরের হরিনা ফেরীঘাট পয়েন্টে এই সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেতুর অন্যপ্রান্তের সংযোগসড়ক মিলিত হবে শরীয়তপুরের সখিপুরে। প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০৩২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর এ প্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ হয়।
সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দক্ষিণ কোরিয়া তার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) এর মাধ্যমে এই প্রকল্পে অর্থায়নে জোরালো আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই তহবিল থেকে অত্যন্ত সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হয়। জাপানের সঙ্গেও ইতোমধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং তারা পিপিপি কাঠামোয় প্রাথমিক আগ্রহ দেখিয়েছে। কর্মকর্তারা আশা করছেন, দুটি প্রকল্পেই যৌথ অর্থায়ন সম্ভব হবে।
যেমনটি জানা যায় ভোলা-বরিশাল সেতু
দুটি প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো ভোলা–বরিশাল সেতু। যার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। ১০ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু, যা দ্বীপ জেলা ভোলাকে স্থায়ীভাবে সড়কপথে দেশের মূল ভূখণ্ডের বরিশালের সঙ্গে যুক্ত করবে।
২০২৪ সালের সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সেতুটি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং আগামী ৩০ বছরে জিডিপিতে ০.৮৬ শতাংশ অবদান রাখবে। পাশাপাশি ভোলা থেকে জাতীয় গ্রিডে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহও সহজ হবে। ২০৩৩ সালের মধ্যে সেতুটি সম্পন্ন করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। জাপানের মিয়াগাওয়া কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এ প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
অর্থায়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় প্রকল্পের বিপুল ব্যয় মেটাতে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে যৌথ অর্থায়ন পাওয়ার চেষ্টা করছে সেতু বিভাগ। কোরিয়ার ইডিসিএফের ঋণের সুদের হার ০.০১ শতাংশ থেকে ০.০৫ শতাংশ, পরিশোধের মেয়াদ ৪০ বছর পর্যন্ত—যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক। তবে শর্ত রয়েছে, কাজ অবশ্যই কোরিয়ান ঠিকাদারদের দিয়ে করতে হবে।
।
দুটি সেতু প্রকল্পের ঋণ দেওয়ার জন্য জাপানকেও অনুরোধ করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বর্তমানে প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করছে। কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ মেঘনা সেতুর প্রকল্প প্রস্তাব তাদের ঋণ সিদ্ধান্তের জন্য চেয়েছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মুহাম্মদ ফেরদৌস
বলেন, "চাঁদপুর-শরীয়তপুর সেতু প্রকল্পে দক্ষিণ কোরিয়া অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়েছে। এছাড়া জাপানের কাছেও ঋণ চাওয়া হয়েছে। যৌথভাবেও অর্থায়ন আসতে পারে। ইআরডিকে বলা হয়েছে, সহজ শর্তে ঋণ নিশ্চিত করে দেওয়ার জন্য।"তিনি আরও জানান, বিস্তারিত নকশা তৈরি হলে ব্যয় কিছুটা বাড়তে পারে
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!