মোঃ রাব্বি ঢালী।। সম্প্রতি চুরি ছিনতাই রাহাজানি যেন এক ভয়ানক মহামারীর আকার ধারণ করেছে। এসব রোধে চাঁদপুরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রয়েছে ব্যাপক সফলতা। চাঁদপুরে এক চাকুরিজীবিকে কৌশলে ডেকে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে চাঁদপুর জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ।সোমবার (২৪ মার্চ) রাতে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার আব্দুর রকিব পিপিএম এর কাছে ভুক্তভোগী মহসিন মাতাব্বরের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবির এসআই মিজানুর রহমান শহরের আদর্শ মুসলিম পাড়া ও স্ট্যান্ড রোড থেকে এদেরকে আটক করেন।
আটককৃতরা হলো: মাহমুদা ইসলাম সাথি, শাহাদাত হোসেন ও মোহাম্মদ ইউসুফ। আটককৃতদের বাড়ি মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলায়। ভুক্তভোগী মহসিন মাতাব্বর শ্রীমঙ্গল মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এ কর্মরত, চাঁদপুরের স্থানীয় বাসিন্দা।
তিনি জানান, গত ১২ ডিসেম্বর ০১৩১০৫২৯৯৫৮ একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে আমার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে কল আসে।
সেই নাম্বার থেকে অপরিচিত একজন মেয়ে আমার নাম ধরে কথা বলেন এবং বলেন তিনি আমাকে আগে থেকে চেনেন এবং আমি যে শ্রীমঙ্গলে চাকরি করি সেটাও তিনি জানেন। আমি ছুটিতে আসলে যাতে তার সাথে দেখা করি। তিনি আমাকে আমার চাকুরী স্থায়ী করার বিষয়ে সহযোগিতা করবেন। আমি তার কথা বিশ্বাস করি। এরপর গত ১৪ ডিসেম্বর ছুটিতে আসি।
তিনি আমাকে ফোন করে বলেন বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোডে এসে তার সাথে দেখা করতে। তার কথামতো ওই এলাকায় যাই। এরপর তিনি আমাকে বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোড এলাকায় হাজী আক্তার হোসেন খানের মালিকানাধীন তাজমহল হালে মনোয়ারা ম্যানশন নামক বাসার নিচতলায় নিয়ে যান।
বাসায় ঢুকেই দেখি সেখানে ৫/৬ যুবক আগে থেকেই বসে আছে। বাসায় ঢুকার সাথে সাথে সেখানে উপস্থিত থাকা যুবকরা আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা শুরু করে এক পর্যায়ে তারা আমাকে মারধর শুরু করে এবং জোরকরে আমার পড়নে থাকা জামা কাপড় খুলে আমার নগ্ন করে ভিডিও করেন, আমি বাঁধা দিলে আসামীরা আমাকে প্রচণ্ড মারধর করে।
এরপর আমাকে আটকিয়ে রেখে আমার কাছ থেকে নগদ ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। আমি টাকা না দিলে তারা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলবে এমন হুমকি দেয়।
বিষয়টি তাৎক্ষণিক আমার স্ত্রীকে ফোনে জানালে সে ২ ঘন্টা পর আমার আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা জোগাড় করে বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোড এলাকায় এসে তাদের কাছে দেয়। টাকা নেয়ার সময় তাদের মুখে মাস্ক পড়া ছিলো। টাকা পেয়ে আসামীরা আমাকে ছেড়ে দেয়।
এছাড়াও আসামীরা হুমকি দেয় এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিলে আমার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিবে। এরপর রাসেল নামে একজন ০১৮৬৫৫৫৭৮১০ নাম্বার থেকে আমাকে ফোন করে আরো টাকা দাবী করে। অন্যথায় সে এটি আমার আত্মীয় স্বজনের কাছে পাঠাবে বলে হুমকি দেয়।
এর কয়েকদিন পর কোড়ালিয়ার আমার পাশের বাড়ির হাবিব গাজী আমার বাড়ীতে আসে এবং আমাকে সেই ধারণকৃত নগ্ন ভিডিও দেখিয়ে নগদ ৫ লক্ষ টাকা দাবী করেন। অন্যথায় ভিডিও এলাকায় ছড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। আমি তাকে পূর্বের ঘটনা বলি এবং ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে বলছে যে, তারা এটা ডিলিট করে দিবে। এখন আমি তোমাকে কোনো টাকা দেয়ার সামর্থ্য নাই। তখন সে আমাকে ১৫ দিন সময় দিয়ে বলে যে, টাকা না দিলে সে এলাকায় এটা ছড়িয়ে দিবে এবং ক্ষতি করবে।
আটককৃতদের বিরুদ্ধে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং ৮৩/ ২৫০ তারিখ, ২৫/০৩/২০২৫।
এ সম্পর্কে তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুর জেলা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবির) এসআই মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা আছে মর্মে স্বীকার করেন।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!