স্টাফ রিপোর্টার - ইমরান হক।।
জুলাই জুড়ে লাখ লাখ মাদ্রাসার ছাত্র রাস্তায় ছিল।
তাদের মধ্যে ১০০ জনের মতো শহীদ হচ্ছেচ্ছ তালিকা অনুযায়ী! আহত হয়েছে হাজারেরও বেশি!
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা হলেন জুলাই আন্দোলনের সেই ফাউন্ডেশন, যাদের উপর ভর করে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে।
অথচ,বছরখানেক না যেতে আড়ালে থাকা এ মানুষগুলোকে সবাই ভুলতে বসেছে। এ জুলাইয়ের নায়ক তো, সে জুলাইয়ের মাস্টার মাইন্ড। সবাই যেখানে নিজেদের ঢোল নিজেরা পেটাচ্ছে, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সেখানে আড়ালেই পড়ে আছে। শহীদ হওয়া প্রায় ৮০ জন মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির খবর ক'জন রেখেছে। তাদের কোন খবর মিডিয়ায় আসে না, রাজনৈতিক দল গুলোও সেভাবে প্রদর করে না!
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেলেও, তাদেরকে কেউই যথাযথ মর্যাদা দেয় না।
বছরখানেক আগের কথা। কি কওমই, কি আলিয়া, কি আহলে হাদীস - ভেদাভেদ ভুলে সব মাদ্রাসার ছাত্ররাই রাজপথে নেমেছিল, তাদের সাথে নেমেছিল অসংখ্য আলেমগণ, যাত্রাবাড়ী থেকে শুরু করে রাজধানীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে তুলেছিল তারা।
২০২৪ সালের জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলন মাস ঘুরতেই রূপ নেয় সরকার পতন আন্দোলনে, ১৯ জুলাই '২৪ শুক্রবার জুমার নামাজের পর ব্যাপক ভাবে প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তোলে আলেম সমাজ। ঐ দিনেই সারা দেশে শহীদ হয় শতাধিক মানুষ, যার মধ্যে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও শহীদ হয়। পরবর্তীতেও তাদের লড়াই অব্যাহত থাকে।
আগস্ট '২৪ এ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হলে সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে মাঠে নামে মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশেষ করে অভ্যুত্থান নসাৎ করতে সারাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং ঢাকার সাথে যখন সারাদেশের যোগাযোগ পথ বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন তাদের তুমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। এরপর ৫ আগস্ট'২৪ লংমার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে যৌথ বাহিনীর তৎপরতায় সারাদেশের সঙ্গে বিছিন্ন ছিল রাজধানী।
এ সময় রাজধানীর প্রবেশ মুখগুলোতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসে অবলীলায়। প্রতিটি পয়েন্টে গ্রুপ হয়ে কর্মতৎপরতা শুরু করে তারা। এর মধ্যে কিছু গ্রুপ পর্যবেক্ষণে রাখে যৌথ বাহিনীর তৎপরতা, কিছু গ্রুপ কাজ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আক্রমন প্রতিহত করতে। এর মধ্যে কেউ কেউ আবার পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আন্দোলনকারীদের ঢাকা অবেশের ব্যবস্থা করে। এভাবে বিভিন্ন কলা-কৌশল অবলম্বন করে যৌথ বাহিনীর অবস্থান ও ব্যবস্থা ভেঙে দেয় তারা।
শুধু ঢাকায় নয় সারাদেশে আন্দোলনে রক্ত দিয়েছেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও। যৌথ-বাহিনী থেকে শুরু করে র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে জীবন যায় তাদেরও। শিক্ষার্থী ছাড়াও ০৭ জন মাদ্রাসা-শিক্ষকের প্রাণ গেছে হাসিনা পতন আন্দোলনে।
সব মিলিয়ে গণঅভ্যুত্থানে শহীদের মধ্যে প্রায় ৮০ জনের সঙ্গেই মাদ্রাসার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২১ জন ছিলেন পবিত্র কোরআনের হাফেজ।
তবে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে শহীদের সংখ্যা আরও বেশি বলে অনেকের ধারণা, বেশিরভাগ সাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা জীবন দিয়েছেন সরাসরি আন্দোলনে নেমে। এছাড়াও হাত, পা ও চোখ হারিয়ে অনেকেই সংকটাপন্ন জীবনযাপন করছেন। এ মানুষগুলো এখনো আড়ালের নায়ক হয়েই আছে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!