ফুটবল মানেই আবেগ, কৌশল ও নাটকীয়তার মঞ্চ। আর যখন ম্যানচেস্টার সিটি ও রিয়াল মাদ্রিদ মুখোমুখি হয়, তখন সেই রোমাঞ্চের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তবে শুধু মাঠের খেলা নয়, সাইডলাইনের যুদ্ধও এই ম্যাচের অন্যতম আকর্ষণ। একদিকে পেপ গার্দিওলার তুমুল আবেগী ও ছটফটে উপস্থিতি, অন্যদিকে কার্লো আনচেলত্তির ধীরস্থির, ঠান্ডা রণনীতি—এই বৈপরীত্যই যেন দুই দলের পার্থক্য বোঝাতে যথেষ্ট।
আজ রাতের ইউরোপীয় মহারণের আগে রিয়াল কোচ আনচেলত্তি নিজেই ম্যাচটিকে ‘ক্লাসিকো’ মর্যাদা দিয়েছেন। কারণ গত চার মৌসুম ধরে চ্যাম্পিয়নস লিগে এই দুই জায়ান্টের নিয়মিত মুখোমুখি হওয়া ম্যাচগুলো ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে উঠেছে। এবার অবশ্য ম্যাচটি আরও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নিতে হবে দুই দলের একজনকে।

গার্দিওলার ‘অস্থির’ পরিকল্পনা বনাম আনচেলত্তির ‘ধীরস্থির’ যুদ্ধনীতি
ডাগআউটে গার্দিওলা মানেই টেনশনের ঝড়! প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর চোখ-মুখের অভিব্যক্তি বদলায়, শিষ্যদের চিৎকার করে নির্দেশনা দেন, পছন্দ না হলে মাথা কুটে মরেন। আবার ম্যাচের মোড় ঘুরতে দেখলে আবেগ সামলাতে না পেরে বসে পড়েন কিংবা শুয়ে পড়ার মতো অবস্থা হয়।
অন্যদিকে আনচেলত্তি যেন শতবর্ষী কোনো সাধুর মতো নির্বিকার। তাঁর একমাত্র নড়াচড়া বলতে চুইংগাম চিবানো! দল গোল খেলেও না, গোল দিলেও না—সবসময় একই রকম শান্ত ও দৃঢ়। এই ঠান্ডা মস্তিষ্কের পেছনে লুকিয়ে থাকে এক অসাধারণ কৌশলী মানসিকতা, যার জোরেই রিয়াল বারবার ইউরোপীয় মঞ্চে জ্বলে ওঠে।
সিটির ব্যর্থতা, রিয়ালের প্রশ্নবিদ্ধ ফর্ম
চলতি মৌসুমে ম্যানসিটি নিজেদের চেনা ছন্দে নেই। টানা চার ও সাত মৌসুমের মধ্যে ছয়বার লিগ শিরোপা জেতা দলটি এবার মাঝ মৌসুমেই শিরোপার দৌড় থেকে ছিটকে গেছে। বিদায় নিতে হয়েছে লিগ কাপ থেকেও। এখন তাদের হাতে আছে কেবল এফএ কাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ—যার মধ্যে ইউরোপ সেরার মঞ্চের লড়াইটা সবচেয়ে কঠিন।
রিয়ালও লা লিগার শীর্ষে থাকলেও তাদের পারফরম্যান্স সন্দেহাতীত নয়। বিশেষ করে বড় ম্যাচগুলোয় বেশ ভুগতে দেখা গেছে আনচেলত্তির দলকে। বার্সেলোনা, আতলেতিকো মাদ্রিদ ও অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে একটিও জয় পায়নি ‘লস ব্লাঙ্কোস’রা। তবে ইউরোপিয়ান ফুটবলে রিয়াল বরাবরই এক অন্য রকম প্রাণী—চাপ যত বাড়ে, তত ভয়ংকর হয়ে ওঠে তারা ।
রিয়ালের ভয়ঙ্কর ফরোয়ার্ড লাইন বনাম সিটির আত্মবিশ্বাসহীনতা
গার্দিওলার দল এই মৌসুমে খাপছাড়া ও পরিকল্পনাহীন ফুটবল খেলছে। কেভিন ডি ব্রুইনা ও আর্লিং হলান্ডের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করলেও প্রতিপক্ষ যদি রিয়াল হয়, তবে শুধু দুজন তারকার ফর্ম দিয়ে কিছুই হবে না।
অন্যদিকে রিয়ালের আক্রমণভাগ রীতিমতো বিধ্বংসী। এমবাপ্পে, ভিনিসিয়ুস, রদ্রিগো ও বেলিংহাম—এই চার ফরোয়ার্ডকে থামানো প্রায় অসম্ভব। গার্দিওলাও সেটা স্বীকার করেছেন, ‘৯০ বা ১৮০ মিনিট তাদের আটকে রাখা অসম্ভব। আমাদের চেষ্টা করতে হবে তাদের খেলায় সম্পৃক্ততা যতটা সম্ভব কম রাখার।’
মাঠে নামার আগেই উত্তেজনার পারদ চরমে! আনচেলত্তির রিয়াল কি চিরাচরিত ইউরোপিয়ান রাজত্ব ধরে রাখবে, নাকি গার্দিওলার সিটি ইতিহাস গড়তে পারবে? সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আজ রাতে ইতিহাদে, যখন ডাগআউটে এক কোচ ছটফট করবেন, আরেকজন মুখে চুইংগাম নিয়ে নিঃশব্দে মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকবেন—আর ফুটবলপ্রেমীরা উপভোগ করবেন আরেকটি ক্লাসিক দ্বৈরথ
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!