মহাকাশের শূন্য মাধ্যাকর্ষণে দীর্ঘ সময় কাটানোর পর পৃথিবীতে ফিরে আসা মানে শুধু ফেরাই নয়, বরং শরীরকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার এক দীর্ঘ ও কঠিন প্রক্রিয়া।
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর সম্প্রতি পৃথিবীতে ফিরেছেন, তবে তাঁরা মহাকাশে আটকে পড়েছিলেন দীর্ঘ ৯ মাস! অথচ তাঁদের মূল অভিযান ছিল মাত্র ৮ দিনের। মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তাঁদের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এই দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে হয়।
মহাকাশ থেকে ফেরার পর চ্যালেঞ্জ
মহাকাশে শূন্য মাধ্যাকর্ষণের কারণে মানবদেহে আসে নানা পরিবর্তন। শারীরিক দুর্বলতা এতটাই প্রকট হয়ে ওঠে যে, পৃথিবীতে ফিরে নভোচারীরা নিজেরাই হাঁটতে পারেন না। ক্যাপসুল থেকে বের হওয়ার পর তাঁদের স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডামিয়ান বেইলি বলছেন, “মহাকাশ এমন এক পরিবেশ যেখানে মানবদেহ অভ্যস্ত নয়। সেখানে থাকার ফলে হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালীগুলো অলস হয়ে পড়ে, হাড় দুর্বল হয়ে যায়, এমনকি বার্ধক্যও দ্রুত বেড়ে যায়।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, মহাকাশে থাকার সময় প্রতি মাসে নভোচারীদের ১% হাড় ও পেশি ক্ষয় হয়। এই ক্ষয় রোধ করতেই তাঁদের নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।
হাড় ও পেশি পুনরুদ্ধারে লেগে যাবে বছর!
প্রথম ব্রিটিশ নারী নভোচারী হেলেন শারমান জানিয়েছেন, মহাকাশ থেকে ফিরে শরীরের হারিয়ে যাওয়া শক্তি পুনরুদ্ধার করতে কয়েক মাস পর্যন্ত জোরালো ব্যায়াম করতে হবে। তবে হাড়ের ক্ষয় ঠিক হতে বছর খানেক সময় লেগে যেতে পারে, আর অনেক ক্ষেত্রে তা পুরোপুরি স্বাভাবিকও হয় না।
শরীরে নানা পরিবর্তন
মহাকাশে থাকাকালীন শরীরের তরল পদার্থ পায়ের দিকে না গিয়ে উল্টো মুখ ও বুকের দিকে উঠে যায়। এতে করে ফিরে আসার পর মুখ ফুলে যায়। মস্তিষ্ক ও চোখেও পরিবর্তন আসে, যার ফলে অনেকের দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউরো-অকুলার সিন্ড্রোম নামক এক জটিলতার কারণে চোখের গঠনে স্থায়ী পরিবর্তন আসতে পারে, যা দৃষ্টিশক্তির ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
পৃথিবীতে ফেরার পর কেমন লাগে?
২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকা ব্রিটিশ নভোচারী টিম পিক বলেছেন, "মহাকাশ থেকে ফিরে প্রথম ২-৩ দিন খুবই কষ্টকর লাগে। শরীর ভারী হয়ে যায়, চলাফেরায় ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।"
নভোচারীদের ভাষায়, মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফেরার প্রথম কয়েকটা দিন এক ধরনের শারীরিক শাস্তির মতো মনে হয়।
এখন কী করবেন সুনিতা ও বুচ?
নাসার এই দুই নভোচারীকে এখন দীর্ঘ শরীরচর্চার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যাতে তাঁরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
মহাকাশের শূন্য মাধ্যাকর্ষণ, চরম আবহাওয়া ও কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা নভোচারীদের জন্য পৃথিবীতে ফেরাটাই আরেকটি নতুন যুদ্ধের শুরু!
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!