টিকটক ভিডিও পোস্ট করা নিয়ে বাবার আপত্তির জেরে প্রাণ গেল এক কিশোরী মেয়ের। পাকিস্তানের কোয়েটায় আনোয়ার উল-হক নামে এক ব্যক্তি নিজের ১৩-১৪ বছর বয়সী মেয়ে হীরা আনোয়ারকে গুলি করে হত্যা করেছেন। প্রথমে তিনি হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন যে, মেয়ের টিকটক ব্যবহার নিয়ে তার আপত্তি ছিল এবং সেজন্যই এই চরম সিদ্ধান্ত নেন।
মার্কিন নাগরিক বাবা-মেয়ে, পাকিস্তানে ফিরে আসার পরই হত্যাকাণ্ড
আনোয়ার উল-হক ও তার মেয়ে দুজনেই মার্কিন নাগরিক। দীর্ঘ ২৫ বছর যুক্তরাষ্ট্রে থাকার পর সম্প্রতি পুরো পরিবার পাকিস্তানে ফিরে আসে। পুলিশ জানায়, হীরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীনই টিকটকে ভিডিও পোস্ট করা শুরু করেছিল, যা বাবার জন্য ছিল ‘আপত্তিকর’। পাকিস্তানে ফেরার পর বিষয়টি নিয়ে পরিবারে মতবিরোধ চলছিল, যা শেষ পর্যন্ত মেয়ের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রথমে অস্বীকার, পরে স্বীকারোক্তি
ঘটনার পর আনোয়ার উল-হক দাবি করেন, অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা তার মেয়েকে গুলি করে হত্যা করেছে। তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তিনি সত্য স্বীকার করেন এবং জানান যে, মেয়ের পোশাক ও সামাজিক আচরণ তার কাছে অগ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। পুলিশের মুখপাত্র জানান, এই হত্যাকাণ্ডকে ‘অনার কিলিং’ হিসেবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অনার কিলিং: পাকিস্তানে বহু নারীর করুণ পরিণতি
পাকিস্তানে অনার কিলিং (সম্মান রক্ষার্থে হত্যা) নতুন কিছু নয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে প্রতি বছর শত শত নারী পরিবারের সদস্যদের হাতে প্রাণ হারান। হত্যার কারণ হিসেবে পরিবারগুলো দাবি করে, সমাজে নিজেদের ‘সম্মান’ রক্ষার জন্য তারা এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন।
পুলিশি তদন্ত ও অভিযুক্তের শাস্তি
হীরার ব্যবহৃত মুঠোফোন পুলিশ জব্দ করেছে, তবে এটি লক করা অবস্থায় রয়েছে। মামলার তদন্তে তার বাবার শ্যালকের জড়িত থাকার তথ্যও উঠে এসেছে এবং তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
২০১৬ সালে পাকিস্তানের আইন পরিবর্তন করে বলা হয়, অনার কিলিংয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দোষী সাব্যস্ত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। আগে পরিবার চাইলে অভিযুক্তরা ক্ষমা পেয়ে মুক্তি পেতেন, কিন্তু এখন সেটির সুযোগ নেই।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় পাকিস্তানসহ আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে। নারীদের নিরাপত্তা ও সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!