টাইটানিক—একটি নাম যা কেবল জাহাজ নয়, বরং এক অমীমাংসিত রহস্যের প্রতীক। ১১২ বছর পেরিয়ে গেলেও আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে থাকা এই দানবীয় জাহাজকে ঘিরে মানুষের কৌতূহল আজও অটুট। নির্মাণের সময় যে জাহাজকে "আনসিংকেবল" বা "অবডুবনীয়" বলা হয়েছিল, সেটিই প্রথম যাত্রাতেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়।
শুরুর গল্প:
১৯১১ সালের ৩১ মে টাইটানিক প্রথমবারের মতো সমুদ্রে ভাসানো হয়। সেই দৃশ্য উপভোগ করতে ১ লাখ মানুষ ভিড় করেছিলেন। এক বছর পর, ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল ক্যাপ্টেন অ্যাডওয়ার্ড জন স্মিথের নেতৃত্বে সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে এই বিশাল জাহাজ। তবে ১৫ এপ্রিল, যাত্রার চতুর্থ দিনেই, আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায় টাইটানিক। এ ঘটনায় প্রায় ১৫০০ জনের প্রাণহানি ঘটে, যা ইতিহাসের অন্যতম বড় মানবিক বিপর্যয়।
কোথায় রয়েছে টাইটানিক?
টাইটানিক ডুবে যাওয়ার ৭৩ বছর পর, ১৯৮৫ সালে রবার্ট বালার্ডের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা এই জাহাজের অবস্থান শনাক্ত করেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২,৬০০ ফুট নিচে আটলান্টিকের তলদেশে দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে স্থির হয়ে আছে টাইটানিক।
কেন তোলা যায় না টাইটানিক?
জাহাজটি সমুদ্র থেকে তুলতে নানা পদ্ধতি চেষ্টা করা হলেও কোনোটি সফল হয়নি। এর পেছনে প্রধান কারণ এর বিশাল ওজন, যা প্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজার টন। এমন ভারী ধাতব কাঠামো তোলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি এখনো মানুষের হাতে নেই। তাছাড়া সমুদ্রের তলদেশে উচ্চচাপ এবং লবণাক্ত পানির কারণে জাহাজটি ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে, যদি এভাবে চলতে থাকে, তবে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে টাইটানিকের অস্তিত্ব পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।
মহাকাব্যিক পরিচিতি:
জেমস ক্যামেরনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র "টাইটানিক" (১৯৯৭) এই জাহাজকে এক নতুন পরিচিতি দিয়েছে। সিনেমার আবেগঘন দৃশ্যগুলো মানুষকে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে, টাইটানিকের গল্প যেন মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নেয়।
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ হয়তো একদিন প্রকৃতির মধ্যে মিশে যাবে, তবে এই জাহাজের ইতিহাস এবং এর সঙ্গে জড়িত মানবিক গল্প চিরকাল মানুষের মনে বেঁচে থাকবে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!