বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পোশাকের অবিশ্বাস্য দামের একটি চিত্র সামনে এসেছে। আমদানির কাগজপত্র অনুযায়ী, ভারতীয় উন্নতমানের থ্রি-পিসের দাম মাত্র ৪৮ টাকা, সাধারণ মানের থ্রি-পিসের দাম ৪০ টাকা, এমনকি মেয়েদের ‘টপস’ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১১ টাকায়! শাড়ির ক্ষেত্রেও একই চিত্র, উন্নতমানের ভারতীয় শাড়ির দাম দেখানো হয়েছে মাত্র ৬০ টাকা, আর পাকিস্তানি পাঞ্জাবির দাম মাত্র ৬৫ টাকা!
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, বাজারে এসব পোশাকের দাম আমদানি মূল্যের তুলনায় ৫০ থেকে ১০০ গুণ বেশি। যেমন, চট্টগ্রামের এক শপিং মলে পাকিস্তানি থ্রি-পিসের দাম ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে!
অবিশ্বাস্য এই দাম কীভাবে সম্ভব?
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যভান্ডারে দেখা গেছে, ভারত ও পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত পোশাকের এই দামে প্রবেশ করা হয়েছে। বিশেষ করে ঈদের বাজারের জন্য এসব পোশাক আনা হয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আমদানির সময় পোশাকের মূল্য এত কম দেখাচ্ছে যে, তা কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছেই অবিশ্বাস্য ঠেকেছে। ফলে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১২ গুণ বেশি দাম নির্ধারণ করে শুল্কায়ন করছে।
এক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অনয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ১৬ মার্চ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পাকিস্তান থেকে মাত্র ৬৫ টাকায় পাঞ্জাবি আমদানি করেছে। তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এর মূল্য ৬১০ টাকা ধরে শুল্কায়ন করেছে এবং প্রতি পিসে ৬২২ টাকা শুল্ক আদায় করেছে।
এভার গ্লোবাল নামের আরেক প্রতিষ্ঠান ১০৫ টাকায় সাধারণ লেহেঙ্গা ও ১২০ টাকায় ‘গর্জিয়াস’ লেহেঙ্গা আমদানি করেছে, যা বাজারে ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে!
শুল্ক ফাঁকির নতুন কৌশল?
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, পোশাক আমদানিতে কম মূল্য দেখানোর কারণ হলো উচ্চ শুল্ক ফাঁকি দেওয়া। আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা এক ধরনের বোঝাপড়া করে এই মূল্য দেখাচ্ছেন, যাতে শুল্ক কম দিতে হয়। যদিও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন এবং নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি ধরে শুল্কায়ন করছে।
দেশি ব্যবসায়ীদের জন্য হুমকি
দেশীয় পোশাক ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই ধরনের ‘আন্ডার ইনভয়েসিং’ দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। ফলে বিদেশি পোশাক তুলনামূলক কম দামে বাজারে আসছে, যা দেশীয় শিল্পের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফ্যাশন এন্ট্রাপ্রেনিউর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এফইএবি) সভাপতি আজহারুল হক আজাদ বলেন, “আমরা দুই ধরনের অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়েছি—একদিকে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশি পোশাক বাজারে আসছে, অন্যদিকে অবৈধভাবে প্রচুর পোশাক দেশে ঢুকছে। এর ফলে দেশীয় উদ্যোক্তারা বিপাকে পড়ছেন।”
নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ১০ মার্চ এক প্রতিবেদনে দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে। শুল্ক ফাঁকি রোধে কাস্টমস কর্মকর্তাদের আরও কঠোর হতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এনবিআরের তথ্যমতে, গত ডিসেম্বর থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তান থেকে প্রায় ৩২ লাখ পিস পোশাক আমদানি হয়েছে, যার মধ্যে ৮ লাখের বেশি পোশাকের দাম দেখানো হয়েছে ১০০ টাকারও কম!
সরকার যদি এখনই যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে দেশীয় পোশাকশিল্প এক বড় সংকটের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
লগইন
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!