ইসলামের ইতিহাসে আশুরা এক তাৎপর্যপূর্ণ ও মর্যাদাবান দিন। আরবি শব্দ "আশুরা" এসেছে "আশারা" থেকে, যার অর্থ দশ। আরবি হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখকে বলা হয় পবিত্র আশুরা। এ দিনটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় ঘটনা, যার অন্যতম হলো হজরত মুসা (আ.)-এর জাতিকে ফিরআউনের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া।
আশুরার রোজার ইতিহাস ও তাৎপর্য
ইমাম বুখারি (রহ.) বর্ণনা করেছেন, নবীজী (সা.) যখন হিজরত করে মদিনায় পৌঁছেন, তখন দেখেন ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা রাখছে। কারণ হিসেবে তারা জানায়, এ দিন আল্লাহ মুসা (আ.) ও তাঁর জাতিকে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফিরআউনকে ধ্বংস করেছেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশে মুসা (আ.) এই দিনে রোজা রাখতেন।
এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, "মুসার প্রতি আমাদের দাবি আরও বেশি," অতঃপর তিনি নিজেও রোজা রাখেন এবং সাহাবাদেরও রাখতে নির্দেশ দেন। (বুখারি: ৩৩৯৭, মুসলিম: ১১৩৯)
আশুরার রোজার ফজিলত
হাদিসে এসেছে, হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, "আশুরার রোজা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।" (মুসলিম: ১১৬২)
অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো মহররমের রোজা, বিশেষ করে আশুরার। (সুনানে কুবরা: ৮৪২১০)
কিভাবে পালন করবেন আশুরার রোজা?
রাসুলুল্লাহ (সা.) কেবল ১০ মহররম রোজা রাখতে বলেননি। বরং তিনি ইহুদিদের ভিন্নতা রাখতে ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ মহররম রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। (মুসলিম: ১১৩৪, মুসনাদে আহমদ: ২১৫৪)
নবীজির গুরুত্বারোপ
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, "আশুরার রোজা নিয়ে নবীজি (সা.) খুব আগ্রহী ছিলেন, যেমনটি তিনি রমজানের রোজা নিয়ে আগ্রহী ছিলেন।" (মুসলিম: ১১৩২)
উপসংহার
আশুরার রোজা শুধু ঐতিহাসিক স্মরণ নয়, বরং এটি একটি সুযোগ—নিজেকে পরিশুদ্ধ করার, বিগত বছরের গুনাহ মোচনের। আমাদের উচিত নবীজির (সা.) নির্দেশনা অনুযায়ী আশুরার রোজা রাখা এবং এই বরকতময় দিনের মর্যাদা রক্ষা করা।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!